কখনো সাদা বাঘ দেখেছেন?
সারা পৃথিবীতে হাতেগোনা কয়েকটি স্থানে রয়েছে বিলুপ্ত প্রায় সাদা বাঘের সন্ধান মিলে।
বিস্ময়ের ব্যাপার হল, শ্রীমঙ্গলের সিতেশ বাবুর মিনি চিড়িয়াখানায় দেখা মিলবে দুর্লভ প্রজাতির এই বাঘটির।
শুধু তাই নয়, চিড়িখানাটিতে রয়েছে এমন আরও অনেক বিরল প্রজাতির প্রাণী!
আজকে আমার অভিজ্ঞতার আলোকে পুরো লেখায় জানাব –
অতএব, আপনি যদি এসবে আগ্রহী থাকেন, তাহলে একদম শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন। কেননা লেখার একদম শেষে কিভাবে একদম কম খরচে যেতে পারবেন তা জানাব।
ইতিহাস ও যাত্রা
বাংলাদেশের অন্যতম সুন্দর জেলা মৌলভিবাজারের পর্যটকপ্রিয় উপজেলা শ্রীমঙ্গল। আর শ্রীমঙ্গলের একমাত্র চিড়িয়াখানা সিতেশ বাবুর মিনি চিড়িয়াখানা।
তবে এই চিড়িয়াখানা তৈরীর ইতিহাস কিন্তু এক দিনের নয়। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের পূর্বে, আজ থেকে প্রায় ৫০ বছর আগে সিতেশ বাবুর পিতা শ্রীশ দেবের প্রথম তৈরী করেন এই চিড়িয়াখানা। তখন অবশ্য চিড়িয়াখানাটি এখনকার জায়গায় ছিল না। চিড়িয়াখানা ছিল নোয়াগাওয়ের বাড়িতে। তত্ত্বাবধানে ছিলেন বন্য প্রানী সেবা আশ্রমের প্রতিষ্ঠাতা শ্রীশ চন্দ্র দেব।
তারপর দ্বায়িত্ব নেন শ্রীশ দেবের ছেলে সিতেশ বাবু। বহু বছর ধরে ধীরে ধীরে বেড়েছে এই চিড়িয়াখানার প্রাণী সংখ্যা। ২০০৯ সালে প্রাণী সংখ্যা এত বেশি হয়ে যায় যে চিড়িয়াখানা অন্যত্র সরিয়ে নিতে হয়।
শহরের রামকৃষ্ণ মিশন রোডে রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমের ঠিক পাশেই একটি দ্বিতল বাড়ি। এই বাড়িতেই থাকেন সিতেশ বাবু। আর এখানেই আছে তাঁর জনপ্রিয় চিড়িয়াখানাটি। ২০০৯ সালে নোয়াগাও থেকে তাঁর রূপসপুর খামারবাড়িতে স্থানান্তর করা হয়।
বর্তমানে চিড়িয়াখানাটি হাইল হাওড়ের পাশে। শহর থেকে মাত্র ১ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত চিড়িয়াখানাটি ১.৮০ একরের বিশাল এলাকা নিয়ে গঠিত।
শিকার ও শিকারী
আগে বেশ মোক্ষম শিকারি ছিলেন সিতেশ বাবু। বন্যপ্রানীর কারনে বেশ কয়েকবার ভয়াবহ ঘটনাও ঘটেছে তাঁর সাথে। ১৯৯১ সালে কমলগঞ্জের পত্রখোলা চা বাগানে শুরু হয় বন্য শুকরের উপদ্রব। বন্য শুকর নিধনে চা বাগান মালিক তাকে অনুরোধ করলে দোনলা বন্দুক নিয়ে বাড়ি ছাড়েন তিনি।
এক রাতে মুখোমুখি হন ভাল্লুকের। এক থাবায় তুলে নেয় তাঁর চোখ আর মুখের কিছু অংশ। ২ মাসের চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন। তারপরেও তাঁর বন্যপ্রাণীর প্রতি প্রেম কমেনি। চিড়িয়াখানায় থাকা পশু পাখির দেখভাল করেন নিজের সন্তানের মত পরম মমতায়।

একবার চিন্তা করুন তো? বুনো ভাল্লুক তার মুখের একপাশ খুবলে নিয়েছে, তবুও মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসে সযত্নে চিড়িয়াখানাটি গড়ে তুলে যাচ্ছেন। পশুপাখির প্রতি এই ব্যক্তির ভালবাসা কোন মাত্রার ভাবুন তো?
আমি মনে করি শুধু এই একটা মাত্র কারণ এই প্রাণী সংগ্রহশালাটি একবার দেখতে যাবার জন্য যথেষ্ট।
ভ্রমণচারী রিভিউ

ভ্রমণচারী চিড়িয়াখানাটিকে ১০ এ ৮ দিবে।
জানুন ভ্রমণচারী কিভাবে রেটিং দেয়?
সিতেশ বাবুর চিড়িয়াখানায় কি দেখবেন?

চিড়িয়াখানা তাঁর বাসার ভেতরেই। বাসার প্রবেশ মুখেই আগেই টিনের গেট। গেট দিয়ে ঢুকতেই চোখে পড়বে গুই সাপ। সামনে আগালেই দেখতে পাবেন মেছো বাঘ। মেছো বাঘের পরে আছে পাখি। সিতেশ বাবুর চিড়িয়াখানাটিতে আছে ১৫০ প্রজাতিরও বেশ পাখি।

আছে সোনালি কচ্ছপ। অসাধারণ এই কচ্ছপ গাছে উঠতে পারে। গাছে উঠতে পারা প্রাণীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য আরেকটি প্রাণী উড়ন্ত কাঠ বিড়ালী। গাছ থেকে লাফিয়ে অন্য গাছে যায় এরা। এক লাফে যেতে পারে ৩০০-৪০০ ফুট পর্যন্ত দূরে। লাফ দিলেই চামড়া ছড়িয়ে ডানার আকার ধারন করে, দেখতে লাগে বিশ্বয়কর।

এই চিড়িয়াখানার অন্যতম আকর্ষন সাদা বাঘ। সাদা বাঘটি আদতে বন বিড়ালের অ্যালবিনো বা সাদা ধরন। এই বাঘ আক্রমণাত্বক স্বভাবের। লম্বায় ২.৫ ফুট আর উচ্চতায় ১.৫ ফুট। আছে ভাল্লুকও। এক জোড়া ময়াল সাপও আছে।
বছর পাচেক আগে একটি সাপ ৩৮ টি ডিম দিয়েছিল। ডিম থেকে বাচ্চা ফুটলে তাদের অবমুক্ত করা হয় লাউয়াছড়া বনে। আছে শঙ্খিনী সাপ। এছাড়াও আরো প্রাণীর মধ্যে আছে বিলুপ্ত প্রায় সাদা বাঘ, বিরল প্রজাতির সোনালী বাঘ, সোনালী হনুমান, সজারু, হিংস্র মেছো বাঘ, চারপাশে আতপ চালে গন্ধ ছড়ানো গন্ধগোকুল, পাহাড়ি বক, নিশি বক, সোনালী কচ্ছপ ও অসংখ্য বিরল প্রজাতির পাখি।

এছাড়াও আছে লজ্জাবতী বানর, লাল হনুমান, মায়া হরিণসহ প্রায় একশ প্রজাতির জীবজন্তু।
রয়েছে কালো-হলুদ ডোরাকাটা ত্রিভুজাকৃতির বিলুপ্তপ্রায় শঙ্খিনীণি। আছে হিমালয়ান সিভিটকেট, মথুরা, সোনালি কচুয়া, বন্য খরগোশ, বন্য রাজহাঁস, লেঞ্জা, ধলা বালিহাঁস, প্যারিহাঁস, কোয়েল, লাভবার্ড, চিত্রা হরিণ, বনরুই, বিভিন্ন রঙের খরগোশ, সোনালি খাটাশ, বড় গুইসাপ, ধনেশ, হিমালয়ান টিয়া, ময়না, কাসে-চড়া, কালিম, বাজিরিক, শঙ্খ চিল, তোতা, সবুজ ঘুঘু, হরিয়াল প্রভৃতিও।
এসব প্রাণীর খাবার হিসাবে দেওয়া হয় মাংস, সবজি আর বাদাম।
গবেষণা কার্যক্রমে সিতেশ বাবুর মিনি চিড়িয়াখানা
২০০৮ সালের ৩১ শে মার্চ বাংলাদেশের প্রথম বড় দাত ফ্যারেট ব্যাজা পাওয়া যায় তাঁর এই চিড়িয়াখানাতেই। এই প্রাণিটি গ্রামবাসীদের হাতে ধরা পরলে তিনি উদ্ধার করেন। পরে এর পরিচয় নিশ্চিত করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক আনোয়ারুল ইসলাম। এ বিষয়ে তাঁর গবেষনা নিবন্ধও রয়েছে।
কীভাবে যাবেন?
শ্রীমঙ্গল যাওয়ার জন্য ট্রেনই সেরা। ঢাকা থেকে শ্রীমঙ্গল যাওয়ার ট্রেন আছে ৪ টি। পারাবত, জয়ন্তীকা, উপবন আর কালনী এক্সপ্রেস।
ট্রেন আছে সকাল ৬.২০, দুপুর ১১.১৫, বিকেল ৩টা আর রাত ৮.৩০ এ। ভাড়া পড়বে মোটামুটি ২৪০ টাকার মত। চট্টগ্রাম থেকে ট্রেন আছে ২ টি। পাহাড়িকা আর উদয়ন এক্সপ্রেস। ছাড়ে সকাল ৯ টা আর রাত ৯ .৪৫ মিনিটে।
বাসেও যেতে পারেন। এসি বাসে ঢাকা থেকে শ্রীমঙ্গলের ভাড়া নেয় ৬০০ টাকা আর নন এসির ভাড়া ৪৭০ টাকা। চট্টগ্রাম থেকে বেশ কিছু পরিবহন চালু আছে। এদের বাসে যেতে পারবেন। নন এসি ভাড়া নিবে ৬৫০ টাকা।
শ্রীমঙ্গল নেমে সিএনজি কিংবা অটোরিকশায় চড়ে খুব সহজেই চিড়িয়াখানাটিতে পৌছাতে পারবেন।
টিকিট ও প্রবেশের সময়
প্রতিদিন সকাল ৮ টা থেকে দুপুর ২টা, আর বিকাল ৩ টা থেকে সন্ধ্যা ৭ টা পর্যন্ত সিতেশ বাবুর চিড়িয়াখানা খোলা থাকে। প্রবেশ করতে পারবেন মাত্র ২০ টাকার টিকিট কেটে।
খাওয়া দাওয়া
শ্রীমঙ্গলে খাওয়া দাওয়া নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। বেশ ভাল রেস্তোরাঁ পেয়ে যাবেন খুঁজলেই। প্রায় সব রিসোর্টে আর আবাসিক হোটেলের আশেপাশে খাবারের ভাল দোকান আছে।
ভ্রমণচারী রিকমেন্ডেশন
- সাতভাই রেস্তোরাঁ
- পানশি রেস্তোরা
আশেপাশে কোথায় যাবেন?
থাকবেন কোথায়?
থাকার জন্য শ্রীমঙ্গলে বেশ ভাল হোটেল আর রিসোর্ট আছে।
কম টাকায় থাকতে চাইলে আছে–
- হোটেল টি টাউন- (০১৭১৮-৩১৬২০২)
- হোটেল প্লাজা- (০১৭১১-৩৯০০৩৯)
- হোটেল ইউনাইটেড- (০১৭২৩-০৩৩৬৯৫)
- গ্রীন ভিউ রিসোর্ট- (০১৭১১৩৯০০৩৯)
আর যদি কিছুটা ভাল মানের হোটেলে থাকতে চান তাহলে দেখতে পারেন–
- টি টাউন রেস্ট হাউজ- (০১৭১৮-৩১৬২০২)
- টি রিসোর্ট, ভানুগাছ – ০১৭১২৯৬০০১
- রেইন ফরেস্ট রিসোর্ট- (০১৯৩৮৩০৫৭০৬)
- টি টাউন রেস্ট হাউস- (০১৯৩৮৩০৫৭০৬)
- নিসর্গ নিরব ইকো রিসোর্ট- (০১৭১৫০৪১২০৭)
- নিসর্গ লিচিবাড়ি ইকো রির্সোট- (০১৭১৬৯৩৯৫৪০)
ভাল মানের হোটেল কিংবা রিসোর্টে প্রতি রাতে খরচ পড়বে ২০০০ থেকে ৫০০০ টাকা। আর কম খরচের হোটেলগুলোতে থাকতে পারেন কেবল ৫০০-২০০০ টাকার মধ্যেই।
আশেপাশের সকল রিসোর্ট ও হোটেলের পূর্নাঙ্গ তালিকা খুঁজছেন?
তাহলে এই লেখাটি পড়ুনঃ শ্রীমঙ্গলের হোটেল ও রিসোর্ট সমূহের তালিকা
সবচেয়ে কম খরচে যাবার প্লান
আপনি যদি কেবল সিতেশ বাবুর চিড়িয়াখানার উদ্দেশ্যে শ্রীমঙ্গল এসে থাকেন, তবে নেহাতই লস করছেন কেননা পুরো শ্রীমঙ্গল জুড়ে দেখার আরও অনেক কিছু আছে।
আপনি যদি একা (এমনকি ২-৩ জন মিলেও) শ্রীমঙ্গল যান আপনার দুই হাজারের উপরে খরচ হবে। ভুল করবেন না, এই খরচ শুধু ডে-ট্রিপেই হবে।
এই খরচ কমাতে পারেন শুধুমাত্র একসাথে ১০ বা তার অধিক সংখ্যক মানুষ একসাথে গেলে। তবে, সমস্যা হলো একসাথে ১০ জন দূরে থাক, দু’য়েক জনই পাওয়া দুস্কর।
কিন্তু, আপনি অন্য সবার মতো, সিজনাল ট্যুরিস্ট না; আপনি মন প্রাণ থেকে ভ্রমণ ভালবাসেন- কিন্তু আপনার আয় কম! তাই বলে কি, স্বল্প খরচে গ্রুপে করে ট্যুরে যাওয়ার জন্য বসে থাকবেন, মাসের পর মাসে?
আচ্ছা, কেমন হয় যদি ভ্রমণচারী আপনাকে একদম স্বল্প খরচে শ্রীমঙ্গল ভ্রমণের অফার দেয়? যেখানে আপনার-
- যাতায়াত
- খাওয়া-দাওয়া
- প্রবেশ টিকেট
সহ আনুষাঙ্গিক সকল খরচ নিয়ে ভাবতে হবেনা!
তাও যদি এই প্যাকেজ আবার ১৫৯৯ টাকায় হয়?
ঠিক ধরেছেন ভ্রমণচারী মাত্র ১৫৯৯ টাকায় শ্রীমঙ্গল ভ্রমণ প্যাকেজ দিচ্ছে!
অবিশ্বাস্য?
ঝটপট এই ফর্মটা ফিলআপ করে ফেলে বুকিং নিশ্চিত করুন। (কাস্টম ট্যুর/ফ্যামিলি ট্যুর নিয়ে আলোচনা করতেও এই ফর্মটি পূরণ করুন)
মৌলভীবাজার জেলার মধ্যে ছোট পরিষরে হলেও এই চিড়িয়াখানাটি অসাধারণ।