কোনো সন্দেহ নেই, পর্যটকদের কাছে শ্রীমঙ্গল দেশের শীর্ষ এক ভ্রমণ গন্তব্যের নাম।
ভ্রমণচারীর এক জরিপ অনুযায়ী, শ্রীমঙ্গলে প্রতিদিন প্রায় ৫০০০ হাজার দর্শনার্থী ঘুরতে আসে।
মসৃন সবুজ চা-বাগানের গালিচায় ছাওয়া উঁচু-নিচু পাহাড়ী টিলা, বনভূমি, চিড়িয়াখানা, গিরিখাদ, লেক, হাওর, ঝর্না কি নেই এখানে! গোটা শ্রীমঙ্গল যেন বৈচিত্রময় সৌন্দর্যের লীলাভূমি।
তাইতো শ্রীমঙ্গলের রুপে বিমুগ্ধ কানাডিয়ান লেখক এন্টনি আর ডেল্টন একে “একখন্ড স্বর্গ” বলে আখ্যয়িত করেছেন।
দুটি পাতা এবং একটি কুড়ির দেশ খ্যাত শ্রীমঙ্গল চায়ের রাজধানী হিসেবে বেশি সমাদৃত।
পুরো লেখায় আমি আপনাকে জানাব, শ্রীমঙ্গলের দর্শনীয় স্থানসমূহ, কিভাবে যাবেন, কোথায় থাকবেন, এবং কিভাবে একটি পূর্নাঙ্গ ট্যূর প্লান সাজাবেন।
কৌতুহল উদ্দীপক?
তাহলে শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন, কেননা আর্টিকেলের একদম শেষে আপনাকে জানাব, কিভাবে যৎসামান্য খরচে শ্রীমঙ্গল ভ্রমণ করে আসবেন।
চলুন, শুরু করা যাক!
বিষয়বস্তুসমূহ
শ্রীমঙ্গলের সেরা ১২ টি দর্শনীয় স্থান
- লাউয়াছড়া উদ্যান
- মাধবপুর লেক
- চা বাগান
- বাইক্কার বিল
- চা রিসোর্ট ও জাদুঘর
- হামহাম ঝর্ণা
- নীলকণ্ঠের সাত রঙের চা
- লাসুবন গিরিখাদ
- সীতেশ বাবুর চিড়িয়াখানা
- বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী হামিদুর রহমান স্মৃতিসৌধ
- রাবার বাগান
- স্বর্ণালী ছড়া
#১. লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান

আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্রগ্রামের এক গবেষনায় এসেছে, পর্যটকদের কাছে শ্রীমঙ্গলের সবচেয়ে বহুল দর্শনীয় স্থান হল লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান। প্রতি ১০০ জন পর্যটক শ্রীমঙ্গলে আসলে ৭০ জনই এই উদ্যানে নিসর্গ ভ্রমণে যায়।
প্রকৃতপক্ষে, অরণ্য প্রেমীদের কাছে, সুন্দরবনের ঠিক পরেই এই উদ্যানের অবস্থান। আশ্চর্যজনক হলেও সত্য, ১৯২৫ সালে ব্রিটিশ সরকারের পরিকল্পিত বনায়নের ফলেই দেশের এই একমাত্র রেইন ফরেস্টটি গড়ে উঠেছে।
পাহাড়ি টিলাঘেরা, বনলতায় আচ্ছাদিত ছমছমে ট্রেইল ধরে উদানটি ঘুরতে হয়। নিসর্গ ভ্রমণের জন্য দেশের সেরা এই ট্রেইলগুলি, যা আপনাকে নৈসর্গিক পরিবেশে হাইকিং এর সুযোগ দিবে।
বুনোপথের দু’পাশ জুড়ে চোখে পড়বে, কীটপতঙ্গ, নানারকম গাছপালা, বনের ভিতর দিয়ে ট্রেইলগুলো এমনভাবে নির্মান করা হয়েছে যাতে বন্যপ্রানীদের বিরক্ত না হয়। জাতীয় উদ্যানটিতে বেশকিছু পাহাড়ী ছড়াও রয়েছে।
বোধহয়, দর্শনার্থীদের নিকট উদ্যানটির সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থানটি হল উদ্যানের বুক চিরে বয়ে চলা রেল লাইন। হুমায়ূন আহমেদের বিখ্যাত চলচিত্র ‘ আমার আছে জলের’ শ্যুটিং হয়েছিল এই রেল লাইনের ধারে।
পুরো লাউয়াছড়া রেইন ফরেস্ট ঘুরে দেখার জন্য ২-৪ ঘন্টা সময়ই যথেষ্ট। শীতের মৌসুমে সবচেয়ে বেশি দর্শনার্থীর পদচারনা থাকে উদ্যানটিতে।
বিস্তারিত জানুন
এখনও কৌতুহলী? লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান নিয়ে লেখা পুরো আর্টিকেলটি পড়ে আসুন!
#২. মাধবপুর লেক

বস্তুত, লেকটির অবস্থান কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নে। ভানুগাঁছ সড়ক হয়ে শ্রীমঙ্গল থেকে মাধবপুর লেকের দূরত্ব ২৫ কিমি।
টিলার উপর সুদৃশ্য চা বাগানে ঘেরা স্বচ্ছ পানির এই হ্রদটি ১৯৬৩ সালে বাধ দিয়ে তৈরি করা হয়। হ্রদ এর দৈর্ঘ্য ৩ কি.মি এবং গড় প্রস্থ ১৭৫ মিটার।
মাধবপুর লেকে আলাদা প্রবেশ ফি নেই। সিএনজি, চান্দের গাড়ী কিংবা ব্যক্তিগত গাড়ীর পার্কিং ও পাস চার্জ নেয়, অর্থাৎ, জনেজনে আলাদা করে আবার টিকেট কাটতে হবেনা।
আর হ্যা, মাধবপুর লেক সকাল ৮ টা থেকে-সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত খোলা থাকে।
যা বললাম তা শুধুই ভূমিকা
দেখুনঃ মাধবপুর লেক কি কি দেখবেন, কেন বিখ্যাত, ও কিভাবে যাবেন?
#৩. শ্রীমঙ্গল এর চা বাগান সমূহ

শ্রীমঙ্গলের কথা শুনলেই আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে সারি-সারি চা বাগান। চা-পাতার সজীবতা কল্পনায় আপনাকে সতেজ করে দেয়। উঁচু-নিচু আঁকাবাঁকা টিলার উপরে অবস্থিত সুদৃশ্য সবুজ চায়ের পত্রপল্লব আপনার মনকে দোদুল্যিত করবে।
দুটি পাতা এবং একটি কুড়ির দেশ খ্যাত শ্রীমঙ্গল চায়ের জন্য বিখ্যাত। বস্তুুত, এজন্যই একে চায়ের রাজধানী বলা হয়।
দেশের সবচেয়ে বড় ৩ টি চা-বাগানে কোথায় অবস্থিত, জানেন?
বুঝেই গেছেন শ্রীমঙ্গলে!
শ্রীমঙ্গল এর কয়েকটি বিখ্যাত চা বাগান হল-
- ফিনলে টি এস্টেট
- জঙ্গলে ঘেরা নূরজাহান টি এস্টেট (রাস্তার দু’পাশে মনোরম চা বাগান অন্যরকম অনুভূতি এনে দেয়)
- বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিটিআরআই) চা বাগান
- ইস্পাহানি টি গার্ডেন
ভ্রমণচারী টিপসঃ রাস্তার দু’পাশ জুড়ে বিস্তৃত নূরজাহান টি স্টেট হাতে সময় নিয়ে ঘুরে দেখতে পারেন। বলা যায়, শ্রীমঙ্গলের সবচেয়ে মনোরম চা বাগানের দৃশ্য এখানেই মিলবে।
জানেন তো, ইংরেজ আমলে এখানে চা চাষের সূচনা হয়েছিল?
একটা মজার ব্যাপারঃ ইংরেজ আমলে বাবুরা চা বাগানে সাদা রংয়ের ভবনে বাস করত সেই রীতি অনুযায়ী এখনও বাঙ্গালী ম্যানেজার বাবুরাও সাদা রংয়ের ভবনে থাকে।
#৪. বাইক্কা বিল
বাইক্কা বিল না গেলে শ্রীমঙ্গল ঘুরে আসা অসম্পূর্ন থেকে যায়।

শুনশান নিরবতায় আচ্ছন্ন গাছপালায় আচ্ছাদিত বিলের পড়ন্ত বিকেলের সৌন্দর্য আপনাকে কল্পনার জগতে নিয়ে যাবে। জল ও ভূমির অসাধারন মিতালী এবং একে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা অতিথি পাখির অভয়াশ্রম সত্যিই মনোমুগ্ধকর।
আমি বাজি ধরে বলতে পারি, শান্ত শ্যামল শীতের এক পড়ন্ত বিকেলে বাইক্কা বিলে ভ্রমণ আপনাকে সারাজীবন মনে রাখার মতো এক অভিজ্ঞতা দিবে।
বিস্তারিত জানুন
জানার শেষ নাই! সবিস্তারে দেখুন- বাইক্কা বিল জলাভূমি অভয়াশ্রম
#৫. শ্রীমঙ্গল চা-রিসোর্ট ও জাদুঘর
শ্রীমঙ্গলে চা চাষের গোড়াপত্তন ঘটে ইংরেজদের হাত ধরে। কমবেশি সবাই জানি।
তবে, সেই ইতিহাসের সাথে জড়িয়ে থাকা সুখ-দুঃখের কথা কি আমরা জানি?
প্রায় দেড়শ বছর আগে ইংরেজরা দরিদ্র বাঙ্গালী শ্রমিকদের বলির পাঠা বানিয়ে চা চাষাবাদের সূচনা করে।
তখন, বাঙ্গালী শ্রমিকদের চা চাষে ব্যবহৃত বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম নিয়ে গড়ে উঠেছে দেশের একমাত্র চা জাদুঘর।
বাংলাদেশের চায়ের ইতিহাস ও এর সাথে জড়িয়ে থাকা শ্রমিকদের আত্বগাঁথা তুলে ধরে চা জাদুঘরটি।
আমি মনে করি এই একটি উদ্দেশ্যে চা জাদুঘর একবার ঘুরে আসতে পারেন। তবে, ইতিহাস প্রেমী না হলে, ভাল নাও লাগতে পারে, সেক্ষেত্রে ইচ্ছানুযায়ী সিদ্ধান্ত নিবে।
বিস্তারিত জানুন
চা জাদুঘরে ঠিক কি কি আছে, কেন যাবেন, কিভাবে যাবেন তার খুটিনাটি সহ জানতে পড়ুন: বাংলাদেশ চা জাদুঘর ও গবেষনা ইনস্টিউট
#৬. হামহাম ঝর্ণা
আপনি কি জানেন, হামহাম ঝর্ণা ২০১০ সালের আগ পর্যন্ত অনাবিষ্কৃত ছিল?

২০১০ সালে আবিষ্কৃত আনুমানিক ১৫০ ফুট উচ্চতার এই বুনো জলপ্রপাতের অবস্থান মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার রাজকান্দি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের দুর্গম কুরমা বন বিট এলাকায় ।
হামহাম ঝর্ণার নামকরণ নিয়ে নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া যায়নি। ব্যপ্তি ও বিস্তৃতিতে হামহাম ঝর্না মাধবকুন্ড ঝর্ণার তিনগুন অথচ আবিষ্কারের পর থেকে এখানে কোনো গবেষক দল আসেনি। সরকারি কোনো অনুসন্ধানী দলও যায়নি। আর একারণে এখানে পর্যটক বান্ধব কোনো অবকাঠামোও গড়ে ওঠে নি!
“অবশ্য তা নিয়ে রোমাঞ্চপ্রেমীদের তেমন মাথা ব্যথা নেই, বরংচ সুবিধেই। প্রাকৃতিক পরিবেশে দূর্গম জঙ্গলের পাহাড়ি পথ অতিক্রম করে, বুনো সৌন্দর্যের এই ঝর্না দেখার চেয়ে রোমাঞ্চকর আর কি হতে পারে?”
পরিবার ছোট ছেলেমেয়েদের নিয়ে দূর্গম পথ পাড়ি দিয়ে হামহামের নগ্ন রূপ দেখতে যাবেন না, ওরা বড় হয়ে যাবে ?। বয়স্ক মহিলা বা পুরুষদের কষ্ট করে না হাম হাম ঝর্ণা দেখেও কাজ নেই, বঙ্গদেশে আরও সুগম পথে সুন্দর ঝর্ণা রয়েছে।
আর হ্যা, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন, কোনোভাবেই একা তো দূরের কথা কয়েকজন দুই-চারজন বন্ধু-বান্ধব মিলে হাম হামে যাবেন না!
তাহলে কিভাবে যাবেন?
- বড় কোনো গ্রুপের সাথে, হোক সেটা বন্ধু-বান্ধব বা আপনার মতো পর্যটকের সম্মিলিত গ্রুপ। ভ্রমণচারীর ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে অন্যান্য পর্যটকদের সাথে যেতে পারেন।
- কোনো ট্যুর অপারেটরের সাথে যেতে গ্রুপে যেতে পারেন। তাতে করে, আপনার সব দুশ্চিন্তা ও ট্যুর প্লানিংয়ের দায়িত্ব তাদের কাঁধে তুলে দিতে পারবেন। এর ভাল দিক হল, ভ্রমণ একেবারেই কমে যাবে। (অবশ্য, আপনাকে ভাল অপারেটর খুজে নিতে হবে)
“আমরা ভ্রমণচারী থেকে হাম হাম ঝর্ণায় স্বল্পমূল্যে প্যাকেজ অফার করে থাকি, হাম হাম ঝর্না ভ্রমণ প্যাকেজের বিস্তারিত দেখে আসুন।”
হাম হাম ঝর্ণা এর দূর্গমতার কারনে পর্যটকদের কাছে এখনো অতটা সহজলভ্য হয়নি।
আর এ কারণেই এখনও ঝর্ণাটি তার বুনো সৌন্দর্যের ভেলকি দেখিয়ে পর্যটকদের বিমোহিত করে রাখতে পারে। কুমারীসুলভ হাম হাম তার নির্ভেজাল যৌবনের আকুতি নিয়ে আপনার অপেক্ষায় বসে আছে।
তাহলে, আপনি কিসের জন্য এখনও দেরি করছেন? চলেন, হামহাম ঘুরে আসি?
বিস্তারিত জানুন
সবিস্তারে জানা প্রয়োজন? দেখুন হামহাম ঝর্ণাঃ এক দুঃসাহসিক অভিযাত্রার রোমাঞ্চকর কাহিনী
#৭. সাত রঙের চা
আপনি এক রঙা চ অথবা দুধ চা খেয়ে অভ্যস্ত।
কিন্তু, সকাল বেলায় ঘুম থেকে উঠে দেখলেন আপনার বউ কাপে চা দিয়ে গেছে। শুধু তাই না, সে চা আবার ৭ লেয়ারের।

কী তাজ্জব!
এ তো অবাস্তব! আপনার ঘুম ভেঙ্গে গেল। এতক্ষণ ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখেছিলেন।
তবে, সাত রঙের চা সত্যিই আছে। ?
শ্রীমঙ্গল গেলে সবাই একবার নীলকন্ঠ কেবিনের ৭ রঙের চা পান করতে যায়।
রমেশ রাম গৌড় নামের এক ব্যক্তি সর্বপ্রথম এই সাতরঙের চা উদ্ভাবন করেন। নীলকন্ঠ কেবিন নামে একটা দোকানে উদ্ভাবিত ৭ কালারের চা বিক্রি করতেন। সেখান থেকে এই চা আস্তে আস্তে পুরো সিলেট জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে।
উল্লেখ্য. তার স্বত্বে শ্রীমঙ্গলে দুইটি চায়ের দোকান রয়েছে।
পুরাতন শাখাটির নাম আদী নীলকন্ঠ টি কেবিন বা নীলকন্ঠ-১ যা রামনগর মনিপুরী পাড়ায় অবস্থিত এবং নতুন শাখার অবস্থান কালিঘাটের ১৪ বিজিবি ক্যাম্পের পাশে যেটা নীলকন্ঠ-২ নামে পরিচিত।
বিস্তারিত জানুন
পুরো লেখা পড়ে আসুন- নীলকন্ঠ টি কেবিনের সাত রঙের চা
#৮. লাসুবন গিরিখাদ
নাম শুনে অপরিচিত লাগছে, তাইনা?
চায়ের রাজধানীর এই দর্শনীয় স্থানটিতে অল্প সংখ্যক পর্যটকেরই পা পড়েছে। বস্তুত, সদ্য আবিষ্কৃত দূর্গম পাহাড়ী অঞ্চলে অবস্থিত এই গিরিখাদটি সম্পর্কে খুব কম সংখ্যক মানুষই জানে।
লাসুবন গিরিখাদের অবস্থান শ্রীমঙ্গল উপজেলা সদর থেকে ২৫ কিমি দূরবর্তী ত্রিপুরা সীমান্তের সিন্দূরখান ইউনিয়নের উপকন্ঠে জঙ্গল ঘেরা পাহাড়ি এলাকায়।

অমিত সম্ভাবনাময়ী এই দর্শনীয় স্থানটি নিঃসন্দেহে দুঃসাহসিক অভিযাত্রীদের জনপ্রিয় ভ্রমণ গন্তব্যে পরিনত হতে যাচ্ছে; ধরে নেয়াই যায়।
জনপ্রিয় হবার আগেই কিংবা খুব বেশি মানুষ যাবার আগেই আপনি ঘুরে আসবেন, ব্যপারটা দারুন না?
বিস্তারিত জানুন
আরও জানতে ব্যাকুল? পড়ুন, লাসুবন গিরিখাত ভ্রমণঃ এক দুঃসাহসিক পর্যটকের অপরাজেয় অভিযাত্রা
#৯. সিতেশ বাবুর চিড়িয়াখানা

আপনি জানেন কি, এটিই সিলেট বিভাগের একমাত্র চিড়িয়াখানা?
বর্তমানে চিড়িয়াখানাটির নতুন নামকরন করা হয়েছে, “বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশন”।
হাইল হাওড় বা বাইক্কার বিলের সন্নিকটেই সিতেশ বাবু নামক এক ব্যক্তির নিজস্ব মালিকানায় ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে উঠেছে চিড়িয়াখানাটি। উপজেলা সদর থেকে সিতেশ বাবুর চিড়িয়াখানাটির দূরত্ব ১ কিমিঃ।
১.৮০ একর জায়গার উপর গড়ে ওঠা এই চিড়িয়াখানাটির প্রধান আকর্ষণ এখানে থাকা কিছু বিরল প্রজাতির প্রানী। এসব প্রাণীর মধ্যে উড়ুক্কু কাঠ বিড়াল, ভাল্লুক, পাহাড়ি ময়না, গন্ধগকুল, লক্ষণ টিয়া, গুইসাপ, মেছো বাঘ, সোনালী কচ্ছপ, হরিয়াল, ইত্যাদি।
তবে, সীতেশ বাবুর এই চিড়িয়াখানার সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও বিরল প্রজাতির প্রানীটি হল সাদা আলবিনো বাঘ।
বিস্তারিত জানুন
দেখে আসুন সীতেশ বাবুর চিড়িয়াখানায় একদিন (কি কি দেখবেন)
#১০. বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী হামিদুর রহমান স্মৃতিসৌধ

হামিদুর রহমানের জন্মস্থান ঝিনাইদহ জেলায়। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় ৪ নং সেক্টরের হয়ে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ থানার ধলই চা বাগানেের পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত ধলই বর্ডার আউট পোস্টে (বিওপি) যোগ দেন।
সময়টা অক্টোবর, ১৯৭১।
সিপাহী হামিদুর রহমান অংশ নেন ১ নং ইস্ট বেঙ্গল সি কোম্পানির হয়ে ধলই সীমান্ত দখল অভিযানে। পাকবাহিনীর পুতে রাখা গুপ্ত মাইন এবং মেশিনগানের তীব্র গুলিবর্ষণে মুক্তিবাহিনী শত্রু রেখার সম্মুখে অগ্রসর হতে পারছিল না।
এমতাবস্থায়, সিপাহী হামিদূর রহমানকে দায়িত্ব দেয়া হয় হানাদার বাহিনীর মেশিনগান পোস্ট গ্রেনেড দিয়ে উড়িয়ে দেয়ার। পাহাড়ী খাল বেয়ে শত্রুর চোখ এড়িয়ে সফলভাবে দুইটি গ্রেনেড মেশিনগান পোস্টে নিক্ষেপ করতে সক্ষম হন তিনি। আরেকটি গ্রেনেড ছুড়তে যাবেন এমন সময় হামিদুর রহমান গুলিবিদ্ধ হন।
অসীম সাহসী বীর হামিদুর রহমান গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ই মেশিনগান পোস্টে যান এবং গ্যানম্যানের সাথে হস্তযুদ্ধে লিপ্ত হন এবং শেষ পর্যন্ত মেশিনগ্যান নিস্ক্রিয় করে রাখতে সমর্থ হন। যা মুক্তিবাহিনীকে শত্রুরেখায় প্রবেশ করে নিশ্চিহ্ন ও দখল করতে সবচেয়ে বড় ভুমিকা রাখে। হামিদুর রহমানের এই বিরত্বপূর্ন অবদানের জন্য সেদিন মুক্তিবাহিনী পাকবাহিনী ফাড়ি দখলে নিতে সমর্থ হয়।
বিরোচিত এই অবদানের জন্য হামিদুর রহমানকে দেশ স্বাধীনের পর বীরশ্রেষ্ঠ মর্যাদায় ভূষিত করা হয়। হামিদুর রহমানের বিরত্বপূর্ন আত্নত্যাগকে সম্মান জানিয়ে ধলই চা বাগানে নির্মান করা হয়েছে নান্দনিক কারুকার্যখচিত স্মৃতিসৌধ ও স্মৃতি আর্কাইভ (Bir Shrestho Hamidur Rahman Monument)।

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসগুলো সম্পর্কে আগ্রহ থাকলে কিংবা বিশদভাবে জানতে চাইলে চায়ের রাজধানীতে গিয়ে এই স্মৃতিসৌধ ও আর্কাইভ ঘুরে আসতে পারেন।
#১১. রাবার বাগান

কখনো শুনেছেন, রাবারকে “সাদা সোনা” হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়?
দেশের সর্বপ্রথম রাবার বাগান প্রতিষ্ঠিত হয় কক্সবাজারের রামুতে। তবে, দেশে উৎপাদিত রাবারের উল্ল খযোগ্য অংশ আসে সিলেট বিভাগ থেকে।
সিলেটে ৪ টি সরকারী রাবার বাগান রয়েছে। আর বেসরকারী ও ব্যক্তি মালিকানাধীন রাবার বাগানের সংখ্যা অগণিত। এর মধ্যে চায়ের রাজধানীতে রয়েছে সাতগাঁও রাবার বাগান।
সম্ভবত, রাবার বাগান নিয়ে সবার কৌতুহলের মূল কারন হলো্ এটা সমতল ভূমিতে জন্মে না এবং রাবার গাছ থেকে কিভাবে সবার নিত্য-ব্যাবহার্য ও পরিচিত রাবার উৎপাদিত হয় জানার আগ্রহ।
আমরা কমবেশি সবাই খেজুরের রস খেয়েছি এবং কিভাবে আহরণ করা হয় তা সম্পর্কে প্রত্যক্ষ করেছি বা জানি। আর, আশ্চর্যের বিষয় হল, ঠিক একই প্রক্রিয়ায় রাবার গাছের বাকল তুলে নল লাগিয়ে “রাবারের কষ” সংগ্রহ করা হয়।
লাউয়াছড়া সড়কের ধরে যাবার পথে এবং চা জাদুঘরে পাশে রাবার বাগান রয়েছে। চা জাদুঘর থেকে রাবার বাগানটি পায়ে হেঁটেই ঘুরে আসতে পারবেন।
আর পাশেই বিটিআরআই চা বাগানের ভেতরে গেলে দেখতে পাবেন, রাবার শীট তৈরির সুবিশাল কারখানা। সংগৃহিত রাবার প্রক্রিয়াজাতকরনের যন্ত্রপাতি ও কর্মযজ্ঞ আপনাকে আনন্দ দিবে।
#১২. স্বর্ণালী ছড়া

জায়গাটি পর্যটকদের কাছে খুববেশ পরিচিত না। অনেকটা অবমূল্যায়িত। বেশিদিন হয়নি স্থানটি পর্যটকমুখে এসেছে।
বলছিলাম স্বর্ণালী ছড়ার কথা। অবস্থান শ্রীমঙ্গলের রাধানগরে। রাধানগর থেকে মাত্র আধা কিলিমিটার দূরে ছোট্ট ব্রিজের নিচে ছড়াটির অবস্থান।
ছড়ার পানি সরু নালা বেয়ে প্রবাহিত হয়।
নালার পাশজুড়ে পাথর। পানির এই প্রবাহ সামনের পাথরগুলোর উপর সবুজ আবরন সৃষ্টি করে দেখে স্থানীয়রা ছড়াটির নাম দিয়েছে স্বর্ণালী ছড়া।
খন্ড খন্ড গর্ত থেকে অবিরাম পানির ধারা আর পাথরের উপর আছড়ে পড়া শো শো শব্দ আপনাকে মুগ্ধ করবে।
শুধু তাই নয়, ছড়া দিয়ে অল্প একটু এগোলেই দেখতে পাবেন বাঁশ বাগান। ভাগ্য ভাল থাকলে বাঁশ বাগানের ঝিঝি পোকার আওয়াজও শুনতে পাবেন। হরেক রকমের বুনো গাছপালাও রয়েছে সেখানে। ছড়ার দুই ধারের বন্য ফুলগুলো সৌন্দর্যের কপালে আরেকটি টিপ একে দেয়।
অসাধারন অথচ অবমূল্যায়িত এবং স্বল্প পরিচিত এই পাহাড়ী ছড়া্য় শ্রীমঙ্গল উপজেলা সদর থেকে অটোতে করে যেতে পারবেন।
শ্রীমঙ্গল কিভাবে যাবেন?
শ্রীমঙ্গলের অবস্থান সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলায়। ঢাকা থেকে ১৮২ কিমিঃ দূরত্বে অবস্থিত জনপ্রিয় এ দর্শনীয় স্থানে সরাসরি বাসে ও ট্রেনে যাওয়া যায়। আকাশপথে বিমানে করে যেতে হলে সিলেট বিমানবন্দর হয়ে বাকীটুকু সড়কপথে আসতে হয়। চায়ের রাজধানী খ্যাত শ্রীমঙ্গলে সবঋতুতেই নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া বিরাজ করে।
যেভাবে যাবেন
বাস, ট্রেন, নাকি প্লেনে, কি’সে যাবেন সে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিন।
একটু দাঁড়ান!
বিমানে যাওয়ার আগ্রহ থাকলে, ত্যাগ করাই শ্রেয়। কেন?
যেহেতু, ঢাকা থেকে আগে সিলেট যেতে হবে এবং পরে সিলেট থেকে ৮২ কিমিঃ সড়কপথ হয়ে যাওয়া লাগে যা আমার মতে আকাশপথে যাবার যৌক্তিক্ততাকে অবনমিত করে।
ট্রেন?
কয়েকদিনের ভ্রমণ পরিকল্পনা থাকলে, আমি আপনাকে পরামর্শ ট্রেনে করে যাওয়া সর্বোত্তম হবে।
কেন?
আপনি জানেন ট্রেন জার্নি অনেক আরামদায়ক হয়। স্বল্প সময়ে পৌছানো যায় যদিও ঢাকা থেকে শ্রীমঙ্গল রেলপথের দূরত্ন ২৩১ কিমিঃ।
আচ্ছা, সিলেটের আঁকাবাঁকা পাহাড়ী পথ ধরে ছুটে চলা ট্রেন; আর আপনি জানালা দিয়ে বাইরে মনোরম প্রকৃতি অবলোকন করবেন, কল্পনায় ব্যপারটা কেমন আসে?
আরেকটা তথ্য দিতে ভুলে গেছিলাম, ট্রেন কিন্তু আপনাকে চায়ের দেশে লাউয়াছড়া উদ্যানের বুকচিরে নিয়ে যাবে।
তবে, ট্রেনে যেতে হলে একদিনের ট্যুর প্লান কার্যকর হবেনা। কেননা, রাতের বেলা ট্রেনের যে শিডিউল রয়েছে, তাতে আপনাকে মধ্যরাতে শ্রীমঙ্গল নামা লাগবে।
সকাল, বিকেল, ও রাতে ঢাকা থেকে শ্রীমঙ্গলের উদ্দেশ্যে ট্রেন ছেড়ে যায়। রাতের বেলায় যে ট্রেনটা যায়, ওইটা ছাড়ে ৮ টায়।
“কথা হচ্ছে, ট্রেনে করে চায়ের দেশে যাইতে মাত্র ৫ ঘন্টা সময় লাগে। রাত ৮ টায় ঢাকা থেকে ছেড়ে গেলে পৌছাবে ১ টা ৩০ এ। ঠিক একারনেই ট্রেনে করে আপনার ডে ট্রিপের খায়েশ পূর্ন হবে না।
ট্রেনে করে যাইতে বেশি খরচ লাগবে না, শ্রেনীভেদে ২৫০ থেকে ১১০০ টাকার টিকিট পর্যন্ত আছে। ট্রেন ভাড়া ও শিডিউলের বিস্তারিত দেখতে এই লেখাটি পড়েন।
আর এই যে, বাংলাদেশ রেলওয়ের অনলাইনে টিকিট কেনার পোর্টাল।
বাস?
সোজা কথা, আপনি যদি ডে ট্রিপের প্লান করেন, বাস আপনার চিরসঙ্গী।
যেহেতু, যাত্রাকালীন সময় মাত্র ৫ ঘন্টার সেহেতু, বাসে করে, ভোরে পৌছা যায় সেই হিসাব অনুযায়ী সুবিধামত বাসের টিকিট পাবেন। এসি, নন-এসি; কল্যানপুর, ফকিরাপুল,সায়দাবাদ- যা ইচ্ছা যেখান থেকে ইচ্ছা উঠতে পারবেন।
হানিফ, এনা, শ্যামলী বাসেই মানুষজন বেশি যায়।
ভাড়াও বেশি না, নন-এসি মাত্র ৩৮০ – ৪০০ টাকা। এসি বাসেও বেশি না। যেমনঃ এনা’র এসিতে ৬০০ টাকা নিবে।
সিলেট থেকে শ্রীমঙ্গল কিভাবে যাব?
সিলেট বেড়াতে গেছেন, এখনে শ্রীমঙ্গল যেতে চাচ্ছেন।
অথবা ধরা যাক, আপনি বিমানে করে আগে সিলেট গেছেন, এখন শ্রীমঙ্গল আসতে চান।
কিংবা, আপনার বাসা সিলেট শহরের আশেপাশে।
ঘটনা যাই হোক না কেন। এক্ষুনি বলে দিচ্ছি, সিলেট থেকে কিভাবে যাবেন।
শোনেন, সিলেট থেকে শ্রীমঙ্গলে যাবার দুইটা উপায় আছে। এক ট্রেন, দুই বাস।
সিলেট থেকে শ্রীমঙ্গলে ট্রেনে যাবেন কিভাবে? এবং সময়সূচী ও টিকেট মূল্য?
ছাড়বে | পৌছাবে | ভাড়া |
সকাল ১০ টা ৩৩ | দুপুর ১ টা | ৫০ – ২৫০ টাকা |
বিকাল ৪ টা ১৩ | সন্ধা ৭ টা | ৫০ – ২৫০ টাকা |
দুপুর ১ টা ৩০ মিনিট | বিকাল ৫ টা | ৫০ – ২৫০ টাকা |
সন্ধা ৭ টা | ৯ টা ৩০ | ৫০ – ২৫০ টাকা |
ছাড়বে | ট্রেনের নাম | ভাড়া (ক্লাসভেদে) |
সকাল ৭ টা | কালনি এক্সপ্রেস | ৫০-২৫০ টাকা |
সকাল ৮.৪০ | জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস | ৫০-২৫০ টাকা |
সকাল ১০.১৫ | পাহাড়ীকা এক্সপ্রেস | ৫০-২৫০ টাকা |
দুপুর ৩ টা | পারাবাত এক্সপ্রেস | ৫০-২৫০ টাকা |
রাত ৯.২০ | উদয়ন এক্সপ্রেস | ৫০-২৫০ টাকা |
রাত ১০ টা | উপবন এক্সপ্রেস | ৫০-২৫০ টাকা |
অনলাইনে ট্রেনের টিকিট কাটবেন এই লিংক থেকে।
আর বাসে করে যেতে চাইলে, সিলেট শহর থেকে শ্রীমঙ্গলগামী বাস পাবেন। ৮২.৩ কিলোমিটার সড়ক পথে বাসে করে ২ ঘন্টা সময় লাগবে। সিলেট থেকে শ্রীমঙ্গল বাস ভাড়া ২৩৫ টাকা।
শ্রীমঙ্গলে কোথায় থাকবেন?
চায়ের রাজধানীতে আপনি ডে ট্রিপে না যেতে চান, এবং সেখানে রাত কাটাতে চান, তবে লেখার এই অংশটি আপনার জন্য।
“বুঝতে পারছেন না আপনার জন্য শ্রীমঙ্গল ডে ট্রিপ ভাল হবে নাকি রাত্রিযাপনসহ ট্রিপ ভাল হবে?” এখানে ক্লিক করে একলাফে নিচে যান”।
এখন আসেন, আপনাকে বলে দেই, কোথায় থাকবেন।
প্রথমেই বলে নেই, জনপ্রিয় ভ্রমণ গন্তব্য হিসেবে, শ্রীমঙ্গলে হোটেল, কটেজ কিংবা রিসোর্টের অপ্রাতুলতা নেই।
তবে, যথেচ্ছভাবে আমি এগুলোর নাম উল্লেখপূর্বক ঠিকানা দিয়ে দিলেই আপনার ভালমতো উপকার হয়ে যাবে, ব্যাপারটা এমন না।
ভুল বলে না থাকলে বরং, আপনার বাজেট, আগ্রহ ও বাড়তি অন্যান্য সুবিধাসমূহ অবশ্যই আপনার সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রধান মানদন্ডগুলো হয়ে থাকার কথা।
তবে, এই পোস্টে সবগুলো ব্যপার ধরে ধরে সে অনুযায়ী আপনাকে হোটেল, কটেজ কিংবা রিসোর্ট সুপারিশ করতে গেলে জিনিসটা অতিরঞ্জিত হয়ে যাবে। অনুচ্ছেদটির নিচে এই টপিকটা নিয়ে আলাদা করে বড়সড়ভাবে লেখা একটা আর্টিকেলের লিংক দিয়ে দিয়েছি।
তবে, এখানে আমি খুব সংক্ষেপে আমার ভাল মনে হয়েছে (সম্ভবত আপনারও লাগতে পারে) এমন কিছু স্বাচ্ছন্দবিধান সম্পর্কে জানাতে চাচ্ছি।
ব্যপারটার গভীরে যাওয়া যাক!
বাজেট পরিসরঃ ৫০০-১০০০ টাকা প্রতিরাত
- হোটেল টি টাউন (০১৭১৮-৩১৬২০২)
- হোটেল প্লাজা (০১৭১১-৩৯০০৩৯)
- হোটেল ইউনাইটেড (০১৭২৩-০৩৩৬৯৫)
- গ্রীন ভিউ রিসোর্ট (০১৭১১৩৯০০৩৯)
- হোটেল মেরিনা : শ্রীমঙ্গল শহরে অবস্থিত হোটেল মেরিনায় এক রাত কাটাতে আপনাকে খরচ করতে হবে ৫০০ থেকে ৪০০০ টাকা। যোগাযোগ: মোবাইল: 01787-33 35 44
বাজেট পরিসরঃ ১০০০-২০০০ টাকা প্রতিরাত
- টি টাউন রেস্ট হাউজ (০১৭১৮-৩১৬২০২)
বাজেট পরিসরঃ ২০০০-২০০০ টাকা প্রতিরাত
- শান্তি বাড়ী
https://www.booking.com/hotel/bd/shanti-bari-shaantibaarrii-resort.html - গ্রান্ড সেলিম
https://www.booking.com/hotel/bd/grand-selim-resort-amp-tour-gsrt.html
- টি রিসোর্ট, ভানুগাছ রোড
বিস্তারিত জানুন
কোথায় থাকবেন তা নিয়ে আমাদের বিশাল গাইড দেখুন- শ্রীমঙ্গলের সেরা ২০ টি হোটেল ও রিসোর্টের তালিকা (ভাড়াসহ)
শ্রীমঙ্গল ট্যুর প্লানঃ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে দুইবার ভাবুন
লেখার শুরুতে আপনাকে কথা দিয়েছিলাম কম খরচে আপনার পুরো ট্যুর প্লান সাজিয়ে দিব। তো চলুন শুরু করি।
শ্রীমঙ্গল বাজেট ট্যুর রেসিপি
আগে ডে ট্রিপের ব্যপারে আসি। অর্থাৎ প্লানটা এমন হবে যে, ধরেন আজ রাতে ঢাকা থেকে (বা আপনার শহর থেকে) রওনা দিলেন, আর কাল ভোর নাগাদ শ্রীমঙ্গল পৌছে গেলেন। এরপর সকাল বেলা নাস্তা সেরে নিয়ে, সিএনজি কিংবা মাহেন্দ্রা গাড়ী ভাড়া করলেন।
এবং তখনই ড্রাইভারের সাথে আলোচনা ও দরদাম সাপেক্ষে ঠিক করলেন এই এই জায়গায় ঘুরায় আনতে হবে সন্ধা ৬ টা থেকে ৭ টার মধ্যে। সবগুলো প্লেসে ঘুরে এবার আসলেন শহরে। শহর থেক কিনলেন শ্রীমঙ্গলের নানারকমের বিখ্যাত চা।
এরপর বাসের টিকেট কাউন্টারে গিয়ে ঢাকার (বা আপনার শহরের) ফিরতি টিকিট নিয়ে নিলেন। ঢাকায় মোটামুটি ৪ ঘন্টার ভেতরে অর্থাৎ, রাত ১০-১১ টার মধ্যে পৌছে যাবেন।
খরচ?
এই তো “গোলাম হোসেন” আসল জায়গায় আসেন এইবার।
ধরেন আপনি নন এসি বাসে করে (কেন ট্রেনে নয় তা একটু পরেই জানাচ্ছি) যাচ্ছেন (কারন, মনমতো সময়ে বন্ধুদের একত্রে পাওয়া সত্যিই দূরুহ কাজ), সেক্ষেত্রে খরচটা মোটামুটি এমন হবে-
- ঢাকা থেকে শ্রীমঙ্গল বাস ভাড়া (যাওয়া-আসা) ৩৮০×২= ৭৬০ টাকা
- সকালের নাস্তা = ৪০ টাকা (পরাটা+ডাল+মামলেট)
- দুপুরের খাবার= ১৬০ টাকা
- সবগুলো স্পট ঘুরে দেখার জন্য সিএনজি ভাড়া = ১২০০ টাকা
- প্রবেশ টিকেট মূল্য (সবগুলো স্পট) = ১০০ টাকা
শ্রীমঙ্গল ভ্রমণ খরচ দাড়ায় = ২২৬০ টাকা
এখন যে কারনে ট্রেনে ডে ট্রিপে যেতে পারবেন না সেটা বলছি (আগেও বলেছি হয়ত)।
প্রথম কথা হল, ওভারনাইট বা ডে ট্রিপের ক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই রাতে রওনা দিতে হবে। কিন্তু, চায়ের রাজধানীর উদ্দেশ্যে ঢাকা থেকে রাত ৮ টায় যে একমাত্র ট্রেনটা ছাড়ে সেটা রাত ১ টা নাগাদ পৌছে যায়। আমাদের ডে ট্রিপ প্লানের সাথে চুড়ান্ত রকম সাংঘর্ষিক ব্যপারটা।
এখন, গুরুত্বপূর্ন আলোচনা হচ্ছে, বাজেট ডে ট্রিপের খরচ প্রায় ২৩০০ টাকা! ১ রাত ও ১ দিনের বাজেট ট্যুরের খরচ কি ২৩০০ টাকা হওয়ার যোগ্য?
আমি বলব মোটেও না! তবে বাস্তবতা হলো, আপনি একা গেলেও সেক্ষেত্রে ১ রাত ও ১ দিনের শ্রীমঙ্গল ভ্রমণ এর খরচ হবে ২৩০০ টাকা (তাও আবার ব্যক্তিগত খরচ বাদে!)।
এখন এই বৈচিত্রময় সৌন্দর্যের লীলাভূমিতে যদি আপনি আপনার পদচিহ্ন রাখতে সত্যিই আগ্রহী হন হতাশ হবেন না, একদম কম খরচে কিভাবে যাবেন তার সহজ দুইটা উপায় বাতলে দিচ্ছি।
- আপনার মতো একদল ভ্রমণপ্রেমিক মানুষের সঙ্গে একসাথে যান।
- অথবা, একসাথে ১০ বন্ধুদের একটা বড় দল বানান, যাতে একত্রে গেলে খরচটা কম আসে।
দুইটা উপায়ই অসাধারন! তবে, আমি হলফ করে বলতে পারি একসাথে আপনার সুবিধাজনক সময়ে (এবং মনমতো) একত্রে এতগুলো বন্ধু যেতে চাইবে না।
অন্যদিকে, আপনার মতো, একগুচ্ছ ভ্রমণচারীর সাথে যেতে চান, তাহলে দেখা যাবে, আপনার সুবিধাজনক সময়ে কাউকে না কাউকে পাবেনই। বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে আপনার মতো, ভ্রমণপাগল মানুষ পাবেন। কম খরচে, মনমতো সময়ে গ্রুপে ট্যুর দেয়ার জুড়ি নেই। তবে, সবচেয়ে সেরা অংশটুকু হলো, নতুন নতুন মানুষের সাথে পরিচিত হওয়া যা আপনার নেটওয়ার্ক কে শক্তিশালী করবে।
আনন্দের ব্যপার হলো, ভ্রমণচারীরও একটা ফেসবুক গ্রুপ আছে! সেখানে আপনি একসাথে ট্যুর দেবার মত ভ্রমণপিপাসু মানুষজন পাবেন। এখনই যুক্ত হোন, এই যে লিংক।
বোনাস টিপস
উপরে উল্লিখিত দ্বিতীয় পন্থা অবলম্বন করে অর্থ বাঁচাতে পরলেও গ্রুপে জয়েন থেকে শুরু করে আপনার মন মতো সময়ে যাওয়ার প্রক্তিয়া একদম নিজ হাতে করা লাগবে, যা ব্যস্ত মানুষজনের জন্য একটু ঝামেলার।
কিন্তু, কেমন হয় যদি, আমরা ভ্রমণচারী নিজেরাই আপনার ঝামেলা নিজ কাধে তুলে নেই?
জেনে অবাক হবেন, ভ্রমণচারী মাত্র ১৪৯৯ টাকায় পুরো শ্রীমঙ্গল ভ্রমণ প্যাকেজ অফার করছে! যাতায়াত, খাবার এবং টিকেটসহ আনুসাঙ্গিক সব খরচ এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকবে!
এত সস্তায় ফেসবুক গ্রুপে ঢু দিয়ে নিজে্র শ্রম ব্যয় না করতে চাইলে এই অফারটি আপনার জন্য!
হলফ করে বলতে পারি, এত কম খরচে অন্য কেউ আপনাকে নিয়ে যাবেনা!
এই সুযোগ প্রতি মাসে মাত্র ৪০ জন ভ্রমণচারী পেয়ে থাকে, মাসে ২ বার প্যাকেজটা চালু থাকে, যেখানে প্রতি প্যাকেজে মাত্র ২০ জন নেই আমরা।
মাত্র ১৪৯৯ টাকায় পুরো শ্রীমঙ্গল ভ্রমণ প্যাকেজ হেলায় হারিয়ে না ফেলতে চাইলে, এখনই বুক দিন!
আপনার জন্য
বৈচিত্রময় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে লীলাভূমি চায়ের রাজধানী শ্রীমঙ্গল ভ্রমণ করতে বেশিরভার ভ্রমণপিপাসু মানুষজনই আগ্রহী থাকে।
তবে, বাদসাধে অর্থ ও সময়ে। অর্থ বাঁচাতে বন্ধুদের সাথে একসাথে যাবার অপেক্ষার প্রহর যেমন শেষ হয়না, তেমন বন্ধুদের সাথে যখন যাবার সময় হয় তখন বাগড়া দেয়, টাকা পয়সা।
কি বিপদ!
চিন্তিত হবেননা, আপনার সমস্যাগুলোকে ভ্রমণচারীকে দেখভাল করার দায়িত্ব দিন। ভ্রমণচারীর বাজেট, শ্রীমঙ্গল ট্যুর প্যাকেজ আপনার নিরাময়ের সারথী। যান এখান থেকে বিস্তারিত দেখে আসেন।
আবার, এইদিকে ব্যস্ত পরিবারে বাবা ঘুরাতে নিয়ে যাবার সময় পায় না, মা বাচ্চাকে নিয়ে একা যাবার সাহস পায়না। এমনকি, বাবার সময় হলেও পুরো পরিবার নিয়ে নিরাপদ, সাজানো গোছানো পরিপাটি একটা ট্যুর প্লান খুব একটা সহজ কাজ নয়। সাথে আছে খরচের ব্যপারটা। তালগোল পাকানো অবস্থা।
একদম ঠিক!
তবে, ভ্রমণচারী আপনাকেও ভুলে যায়নি। সবচেয়ে কম খরচে নিরাপদে পরিবার পরিজন নিয়ে বেড়ানোর নিশ্চয়তা নিয়ে ভ্রমণচারী ঠিক আপনার জন্য সবচেয়ে সেরা ফ্যামিলি ট্যুর প্লানিং নিয়ে অপেক্ষা করছে।
আপনি যদি, এ পর্যন্ত পড়ে থাকেন, আপনি ভ্রমণচারীকে বিশ্বাস করে ফেলছেন, চলেন ভ্রমণচারীর সাথে আপনার পরিবারের ট্যুর প্লানিং নিয়ে কথা বলা যাক। আমরা আপনাকে বিনা পয়সায় যথাসাধ্য পরামর্শ দেবার জন্য আগ্রহী থাকব।
ভ্রমণচারীর সাথে কথা বলতে, এখান থেকে এখনই (এবং ফ্রি’তে) শিডিউল ঠিক করে নিন। আপনার সমস্যা সমাধানের জন্য আমরা কর্মঘন্টার বাইরেও মুখিয়ে থাকব যথাসাধ্য সাহা্য্য করার।
ফ্যামিলি ট্যুর সাজানোর পরামর্শের জন্য ফ্রি’তে ভ্রমণচারীর সাথে এখনই শিডিউল দিন।
“বিকিকিনি শেষ।”
বিদায় বেলায় বলে যান, চায়ের দেশ শ্রীমঙ্গল এর দর্শনীয় স্থানগুলির মধ্যে ঠিক কোনটি আপনার সবচেয়ে পছন্দের। নিচে কমেন্ট করে জানান এখনই!
We are 6 persons 5 adults and 1 child would like to tour of Srimongal . We want to stay one night at any moderate resort or hotel . If we plan on 22 Oct night by bus and return on 24 Oct afternoon . Can you please arrange a tour plan with places we can shight scene and advise rates . My phone 01927625248
অনুগ্রহ করে, কাস্টম ট্যুর সাজানোর জন্য উপরে উল্লিখিত ফর্মটি পূরণ করুন। আমাদের ট্যুর ম্যানেজার তাৎক্ষনিকভাবে আপনার সাথে যোগাযোগ করবে।
ভ্রমণ বিষয়ক অনেক ভালো একটি পোস্ট। এখান থেকে অনেক কিছু জানতে পারলাম
শ্রীমঙ্গল দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ বাংলাদেশের সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলার একটি উপজেলা। এটি জেলার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত এবং পশ্চিমে হবিগঞ্জ জেলা এবং দক্ষিণে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সীমানা।
We are two people husband and wife, would like to travel srimangal in middle of October, 2023 . We want to stay 1 night at srimangal. What could be the best option to go there by train from airport station and how much could be approximate cost?
খরচের বড় অংশটি নির্ভর করবে আপনি কেমন মানের হোটেলে অবস্থান করছেন তার উপর। মাঝারী মানের হোটেলে থাকলে ১ রাত অবস্থান, পুরো শ্রীমঙ্গল ঘুরে দেখা, খাবার ও আনুসাঙ্গিক খরচসহ আনুমানিক ১০, ০০০ টাকা খরচ হবে।