লালবাগ কেল্লা (Lalbagh Kella), নামটি শুনলেই মনে পড়ে যায় ছোটবেলার কথা। মনে পড়ে যায়, বইয়ের পাতার রঙিন হরফে ছাপানো সুবেদার শায়েস্তা খাঁর শাসনামলের সুদিনের কথা। টাকাই আট মণ চাল কিনতে পারার সেই ইতিহাস কার ই বা অজানা!
বঙ্গদেশে যে কয়টি কেল্লা বা দূর্গ রয়েছে তন্মধ্যে লালবাগ দূর্গ সবচেয়ে প্রসিদ্ধ। অসমাপ্ত এই দুর্গটি বাংলায় মুঘল স্থাপত্যের একমাত্র স্মৃতি বহন করে।
দুর্গটিতে মুঘল স্থাপত্য-ঐতিহ্যের উপকরণ হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে কষ্টি পাথর, মার্বেল পাথর আর রঙ-বেরঙের টালি।
লালবাগ ছাড়া বাংলাদেশের আর কোনো ঐতিহাসিক নিদর্শনে এখন পর্যন্ত এমন সংমিশ্রণ পাওয়া যায়নি।
মূলত, বাংলার রাজধানী ঢাকা থাকাকালীন কেল্লাটির বিপুল উৎকর্ষ সাধিত হয় এবং জনপ্রিয়তা লাভ করে। ৩৩৩ বছর ধরে ঠাই দাড়িয়ে থাকা ঢাকা শহরের প্রতিচিহ্ন এই লালবাগ দূর্গ।
- লালবাগ কেল্লার নামকরণ
- লালবাগ কেল্লা কোথায় অবস্থিত?
- লালবাগ কেল্লার ইতিহাস
- লালবাগ দূর্গের অবকাঠামো ও নির্মাণশৈলী
- লালবাগ দূর্গের বর্তমান অবস্থা
- লালবাগ কেল্লা জাদুঘর
- প্রবেশ টিকেট মূল্য
- লালবাগ কেল্লা পরিদর্শনের সময়সুচি ২০২১
- লালবাগ কেল্লা কিভাবে যাব?
- লালবাগ কেল্লায় কেন যাব?
- ভ্রমণচারীরা বারবার যেসব প্রশ্ন করে থাকে
চলুন তবে, ঐতিহাসিক এই দূর্গ সম্পর্কে জ্ঞানার্জন শুরু করা যাক !!
লালবাগ কেল্লার নামকরণ
এলাকার নামের সাথে মিল রেখে শায়েস্তা খাঁ কেল্লার নামকরণ করেন লালবাগ কেল্লা। সম্রাট আওরঙ্গজেব ১৬৮০ সালে কিল্লা আওরঙ্গবাদ এর সত্ত্ব শায়েস্তা খানের হাতে তুলে দেন এবং একই সাথে অসমাপ্ত দুর্গটির নির্মাণ কাজ শেষ করার জন্য অনুরোধ করেন। সুবেদার শায়েস্তা খাঁ ঢাকায় এসে কেল্লাটির নাম পরিবর্তন করে এ নামকরন করেন।
১৬৭৮ সালে সম্রাট আওরঙ্গজেবের তৃতীয় শাহজাদা মুহাম্মদ আজম শাহ সুবেদার হিসেবে ঢাকায় এসে শায়েস্তা খাঁর বাসভবন উচ্ছেদ করে শুরু করেন দূর্গ তৈরীর কাজ। সুবেদার আজম শাহের নতুন নতুন প্রাসাদ নির্মাণে প্রবল ঝোঁক ছিল। এরই ধারাবাহিকতায় আযম শাহ লালবাগ দূর্গটি নির্মাণ করেন। পিতার প্রতি সম্মান দেখিয়ে দূর্গটির নাম রাখেন “কিল্লা আওরাঙ্গবাদ”।
কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই সম্রাট তাকে দিল্লিতে ডেকে পাঠান মারাঠাদের দমনে। ফলে কেল্লাটির নির্মাণ কাজ অসমাপ্ত থেকে যায়।
১৬৮০ সালে সুবেদার শায়েস্তা খাঁ দ্বিতীয়বারের মতো বাংলার সুবেদার হিসাবে ঢাকায় আসেন এবং কেল্লার এ নতুন নামকরন করেন।
লালবাগ কেল্লা কোথায় অবস্থিত?
ঢাকার দক্ষিণ-পশ্চিমে পুরান ঢাকার লালবাগ এলাকায় ঐতিহাসিক এই দুর্গটি অবস্থিত। পূর্বে কেল্লাটির পেছন দিক দিয়ে বুড়িগঙ্গা নদী বয়ে যেত। কিন্তু ১৮৯৭ সালের প্রবল ভুমিকম্পে বুড়িগঙ্গার গতিপথ পরিবর্তিত হয়ে যায়।
লালবাগ কেল্লার ইতিহাস
১৬৬৩ সালে বাংলার সুবেদার মীর সুজাউদ্দিন মৃত্যুবরন করেন। এরপর সুবেদার হয়ে বাংলায় আসেন মীর্জা আবু তালিব বেগ ওরফে শায়েস্তা খাঁ। ১৬৬৪ সাল থেকে ১৬৭৮ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলায় শাসন করেন। শায়েস্তা খাঁ অত্যন্ত জনদরদি শাসক ছিলেন। শাসনামলে বাংলার অর্থনীতি ফুলে ফেপে ওঠে।
১৬৭৮ সালে শায়েস্তা খাঁ দিল্লিতে ফিরে যান। ফলস্বরুপ ১৬৭৮ সালে বাংলায় নবনিযুক্ত সুবেদার হিসাবে দায়িত্ব নেন আওরঙ্গজেবের পুত্র সুলতান মুহাম্মদ আযম শাহ। সুবেদার হিসাবে আযম শাহ প্রথমেই নজর দেন প্রাসাদ নির্মাণে। মুহাম্মদ আযম শাহের প্রাসাদ-দুর্গ নির্মাণে প্রবল ঝোঁক ছিল। ঐতিহাসিকদের মতে এটিই ছিল লালবাগ দুর্গ সৃষ্টির কারন।
সুবেদার আযম শাহ ঢাকায় মুঘল নির্মাণশৈলী অনুসরণ করে প্রাসাদ-দুর্গটির নকশা প্রনয়ন করে নির্মাণ কাজ শুরু করেন। কিন্তু ১৬৮০ সালে মারাঠি বিদ্রোহ দমনে দিল্লি থেকে সুবেদার আজম শাহের ডাক পড়ে। ফলে বাংলায় ১৫ মাসের সুবেদারি ছেড়ে আজম শাহকে দিল্লী ফিরে যেতে হয়। ফলশ্রুতিস্বরুপ প্রাসাদ-দুর্গটির নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে যায়। অবশ্য এই স্বল্প সময়েই তিনি মসজিদ ও দরবার হলের নির্মাণকাজ সম্পন্ন করেন।
১৮৮০ সালে বাংলায় ২য় বারের মত সুবেদার হিসাবে শায়েস্তা খাঁ নিযুক্ত হন। এসময় মুহাম্মদ আজম শাহ শায়েস্তা খানকে লালবাগ দূর্গের অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করতে অনুরোধ করেন। ১৮৮৪ সাল পর্যন্ত শাহেস্তা খাঁ দুর্গটির নির্মাণ কাজ এগিয়ে নিয়ে যান।
কিন্তু, এসময় হঠাৎ শায়েস্তা খাঁর অতি আদুরে কন্যা ইরান দুখত রাহমাত বানু ওরফে পরি বিবি মারা যায়।নিজ কন্যার মৃত্যুর শোকে-দুঃখে শায়েস্তা খাঁ কেল্লার নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেন। আর পরিবিবির স্মৃতির উদ্দেশে একটি চমৎকার সমাধি সৌধ নির্মাণ করেন। ১৬৮৮ সালে শায়েস্তা খাঁ সুবেদারী থেকে অবসর নিয়ে ঢাকা ত্যাগ করেন এবং আগ্রা ফিরে গিয়ে অবসর জীবন অতিবাহিত করেন।
১৭০৪ সালে বাংলার রাজধানী ঢাকা থেকে মুর্শিদাবাদে স্থানান্তর করা হয়। এরপর থেকেই অসমাপ্ত কেল্লাটি তার জৌলুস হারাতে থাকে।
লালবাগ দূর্গের অবকাঠামো ও নির্মাণশৈলী
লালবাগ দূর্গ ১৯ একর জায়গার উপর প্রতিষ্ঠিত। কেল্লাটির তিনটি প্রবেশদ্বার রয়েছে যার মধ্যে দুটি প্রবেশদ্বার বর্তমানে বন্ধ রাখা হয়। পূর্বে ধারনা করা হতো দুর্গটির তিনটি অংশ রয়েছে। কিন্তু আধুনিক প্রত্নতাত্নিক খননের পর জানা যায় কেল্লাটি অনেকগুলি অংশে বিভক্ত। এগুলি হলঃ
- মসজিদ
- পরিবিবির সমাধি
- দেওয়ান-ই-আম
- সুবিশাল তোরণসহ আংশিক ধ্বংস প্রাপ্ত উঁচু দুর্গ প্রাচীর
- দুর্গ প্রাচীরের দক্ষিণ দিকের আস্তাবল, প্রশাসনিক ভবন ও কিছু বাসভবন
- দক্ষিন-পশ্চিমে জলাধার-ফোয়ারা বেষ্টিত ছাদ বাগান
- দক্ষিন-পশ্চিম কোনের ৫ টি বুরুজ
লালবাগ কেল্লা মসজিদ (শাহী মসজিদ)
অসাধারন কারুকার্যখচিত এই মসজিদটি মুগ্ধ করার মত। শ্বেত পাথরে নির্মিত, তিন গম্বুজওয়ালা অসাধারন সৌন্দর্যমণ্ডিত এই মসজিদটি মুঘল স্থাপত্যশৈলীর চমৎকার নিদর্শন। ১৬৭৮-১৬৭৯ সালে সুবেদার মুহাম্মদ আযম শাহ মসজিদটি নির্মাণ করেন।
বুরুজ
দুর্গ প্রাচীরের দক্ষিনে ৫ টি বুরুজ ছিল। এই বুরুজগুলো দোতলা সমান উচ্চতা-বিশিষ্ট। বুরুজগুলোর মধ্যে ছিল একটি ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গ যেটা নিয়ে লোকমুখে নানা ভৌতিক কাহিনী প্রচলিত আছে।
কথিত আছে এ গুহায় যে প্রবেশ করে সে আর কখনো ফিরে আসেনা। বর্তমানে সুড়ঙ্গমুখটি স্থায়ী গেট দিয়ে বন্ধ করে রাখা হয়েছে।
দেওয়ান-ই-আম (বিচারালয়)
দ্বিতল এই ভবনটি দুইটি কাজে ব্যবহার করা হত। বাসভবন(হাম্মামখানা) এবং বিচারালয় হিসাবে। নিচতলা ছিল হাম্মামখানা তথা বাসভবন এবং উপরের তলা বিচারালয়। এখানেই শায়েস্তা খাঁ থাকতেন এবং সমস্ত বিচার-আচার সম্পন্ন করতেন।
২০২০ সালে মার্কিন অর্থায়নে লালবাগ কেল্লার সংস্কার কাজ শুরু হয় যা ২০২৩ এর মাঝামাঝি শেষ হয়। দেওয়ান-ই-আম (মোগল সুবেদারের বাসস্থান ও কোর্ট) ও হাম্মামখানা (গোসলখানা) এই প্রকল্পের আওতায় সংস্কার করা হয়।
পরিবিবির মাজার ও সমাধিসৌধ
লালবাগ দূর্গে টিকে থাকা স্থাপত্যগুলির মধ্যে পরিবিবির সমাধি অন্যতম। এটি দরবার হল এবং দুর্গের মাঝখানে অবস্থিত। সমাধিসৌধটি ২০.২ বর্গমিটার। আনুমানিক ১৬৮৪-১৬৮৮ সালের এই সময়কালে শায়েস্তা খাঁ এটি নির্মাণ করেন। কৌতুহল উদ্দীপক বাাপার হল এখানে আসলে পরিবিবির মরদেহ নেই। উল্লেখ্য পরিবিবির সাথে ১৬৬৮ সালের ৩রা মে আওরঙ্গজেবের ৩য় শাহজাদা মুহাম্মদ আযম শাহের বিবাহ হয়। ১৬৮৪ সালে পরিবিবির অকাল মৃত্যু ঘটে।
২০১৮ সালে আমি লালবাগ দূর্গে গিয়েছিলাম। তখন প্রধান ফটক দিয়ে যখন ঢুকছিলাম তখন আমি পরিবিবির মাজারকে দুর্গ ভেবে ভুল করেছিলাম।
আসলে এখনকার লালবাগ দূর্গের কথা ভাবলে আমাদের চোখে যে ছবিটি সবচেয়ে আগে ভেসে ওঠে তা হল পরিবিবির সমাধিসৌধ (pori bibir majar)। এই সমাধি স্থাপত্যটি চারকোনা বিশিষ্ট। এর ভেতরে ৯টি ঘর রয়েছে। সমাধি ধারনকারী ঘরটিকে কেন্দ্র করে এর চারপাশে ৮ টি ঘর রয়েছে। উল্লেখ্য মার্বেল পাথর, কষ্টি পাথর এবং চোখ ধাদানো কারুকারজমণ্ডিত টালি দিয়ে ঘর গুলি সাজানো।
সৌধটির অন্যতম আকর্ষণ হল এর ছাদ ও গম্বুজ। সমাধিসৌধের ছাদটি করবেল পদ্ধতিতে কষ্টি পাথরে তৈরি। এছাড়া চারপাশে অষ্টকোন বিশিষ্ট ৪টি মিনার এবং মাঝখানে একটি গম্বুজ রয়েছে। স্থাপনাটির অভ্যন্তর ভাগ শ্বেত পাথরে নির্মিত।
জলাধার-ফোয়ারা বেষ্টিত ছাদ বাগান
লালবাগের কেল্লাটির অন্যতম আকর্ষণ এই ছাদ। যদিও এখন এটির জৌলুস নাই তবুও এই ছাদে গেলে অনুভব করা যায় ছাঁদ-বাগানটি কতটা দৃষ্টিনন্দন ছিল। আমি যখন হাটছিলাম তখন কল্পনায় ব্যবিলিয়নের ঝুলন্ত উদ্যানের চিত্রিত ছবি ভাসছিল।
কেল্লার ছাঁদ বাগানটিতে ছিল হাটার জন্যে পর্যাপ্ত জায়গা। এখানে পরিকল্পিত্ভাবে পানি সরবরাহের বাবস্থা ছিল–শুধু বাগানেই নয় বরং পুরো প্রাসাদ-কেল্লাজুড়েই ছিল পরিকল্পিত পানি সরবরাহের বাবস্থা। আর এটিই ছিল ঢাকা শহরের প্রথম কোনো পরিকল্পিত পানি সরবরাহের ব্যবস্থা।
লালবাগ দূর্গের বর্তমান অবস্থা
লালবাগ দূর্গে প্রচুর পরিমান বিদেশী পর্যটক আসে। কিন্তু দুঃখের ব্যাপার হলো-তা সত্তেও কেল্লাটির ভেতর ও বাহিরের শ্রী বৃদ্ধিতে তেমন কোনো অগ্রগতি চোখে পড়ে না। প্রধান ফটকের সামনে বিশাল বাসভবন, হকার, ফটকের প্রবেশদ্বারের সামনের ময়লা আবর্জনা, টিকেট কাউন্টারের মলিন দশা যেকোনো দেশি ও বিদেশী পর্যটককে হতাশ করবে। আমার প্রবেশের সময় এমনই লেগেছিল।
তবে ভাল দিক হল কেল্লার ভেতরটা মোটামুটি সুন্দর ও পরিপাটি। প্রধান ফটক দিয়ে কেল্লার ভিতরে প্রবেশ করার সময় দুপাশের বাগান মন প্রফুল্ল করে তুলে। তবে কেল্লাটির উঁচু প্রাচীর আমার কাছে ভঙ্গুর ও অযত্নে অবহেলিত বলে মনে হয়েছে। আমি মনে করি কর্তৃপক্ষের প্রধানচ্যালেঞ্জ হল কেল্লা ও প্রত্নতাত্নিক নিদর্শনগুলি এমনভাবে সংরক্ষন করা যা কিনা সুদীর্ঘ কাল টিকে থাকার নিশ্চয়তা দেয়।
লালবাগ কেল্লা জাদুঘর
দেওয়ান-ই-আম এবং দরবার হল বর্তমানে জাদুঘর হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এখানে মুঘল শাসন আমলের অনেক নিদর্শনের দেখা মিলবে। শায়েস্তা খাঁর ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের জিনিসপ্ত্র স্ংরক্ষন করে রাখা হয়েছে জাদুঘরে। এখানে হাতে লেখা কোরআন শরীফও রয়েছে।
মুঘল আমলে ব্যবহৃত কামানও দেখতে পাবেন, জাদুঘরের সামনে।
প্রবেশ টিকেট মূল্য
বাংলাদেশিঃ
প্রাপ্ত বয়স্ক বাংলাদেশি নাগরিকের জন্যে টিকেটের মূল্য ২০ টাকা। তবে ৫ বছরের নিচের বাচ্চাদের টিকেট লাগেনা।
সার্কভুক্ত দেশের নাগরিকঃ
সার্কভুক্ত দেশের নাগরিকদের জন্যে টিকেট মূল্য ২০ টাকা।
বিদেশীঃ
সার্কভুক্ত দেশ বাতিত অন্য যেকোনো দেশের নাগরিকের জন্যে প্রবেশ টিকেট মুল্য ২০০ টাকা।
লালবাগ কেল্লা পরিদর্শনের সময়সুচি ২০২১
লালবাগ কেল্লা রবিবার বন্ধ থাকে। সোমবার অর্ধ-দিবস খোলা থাকে। শুক্রবার ১২.৩০ থেকে ৩টা পর্যন্ত বন্ধ থাকে। এছাড়া সকল সরকারি ছুটিতে দুর্গটি দর্শনার্থীদের জন্যে বন্ধ থাকে।
গ্রীষ্মকাল
সকাল ১০ টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত।
শীতকাল
সকাল ৯ টা থেকে সন্ধ্যা ৫ টা পর্যন্ত।
সব ঋতুতেই দুপুরে মধ্যাহ্ণভোজের জন্যে ১ টা – ১.৩০ পর্যন্ত বন্ধ থাকে।
লালবাগ কেল্লা কিভাবে যাব?
দুর্গটিতে যাবার জন্যে আদর্শ রুট হল আজিমপুর। ঢাকার যেকোনো প্রান্ত থেকে আজিমপুর বাস স্টপেজে আসুন। এরপর একটি রিকশা নিয়ে কেল্লায় পৌছাতে পারবেন। রিকশা ভাড়া আজিমপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে ১৫-২০ টাকা। গুলিস্তান হয়েও খুব সহজেই লালবাগে যাওয়া যায়।
সেক্ষেত্রে আপনাকে গুলিস্তানের গোলাপ শাহ মাজার থেকে টেম্পু নিতে হবে। ভাড়া ১০ টাকা। এছাড়া শাহবাগ, নিউমার্কেট , গুলিস্তান যেকোনো জায়গা থেকেই সরাসরি রিকশাযোগে আরামছে পৌঁছে যেতে পারবেন লালবাগে।
লালবাগ কেল্লায় কেন যাব?
মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, ধুর প্রাচীন এইসব দালান-কোঠার কি দেখব! কি দেখার আছে এসব। আমাকে এসব টানেনা।
আচ্ছা ঠিক আছে, বুঝলাম আপনার প্রাচীন এসব দালান-কোঠা টানেনা। তাহলে কি ইতিহাস আপনাকে টানেনা? দেশের প্রাচীন এই স্থাপনার সাথে জড়িয়ে থাকা ঐতিহ্য কি আপনাকে আবেদন করেনা?
বাঙালী হিসাবে, বাংলাদেশী হিসাবে, একজন সুনাগরিক হিসাবে এদেশের ঐতিহ্যের সাথে জড়িয়ে থাকা সংস্কৃতিকে কি এমন মনোভাব দ্বারা অবমূল্যায়িত করা হয়না? নাকি এসব আপনি অস্বীকার করেন!
ভাই শুধু বলার জন্যে বলা ?। কারন আমার কোনো সন্দেহ নেই ভ্রমণ পাগল ওই আপনি উপরে ছুড়ে দেওয়া প্রতিটি প্রশ্নের উত্তরে ইতিবাচক।
আসল কথায় আসি। লালবাগ দূর্গে কেন যাবেন?
প্রথমত এটি দেশের একমাত্র কেল্লা যা কিনা মুঘল ঐতিহ্যকে বয়ে চলেছে। আর মুঘল স্থাপনা মানেই নান্দনিক কারুকার্যখচিত অসাধারন সব স্থাপত্যশিল্প। হ্যা! মুঘল স্থাপত্যশৈলীর অনুপম নিদর্শন ঢাকার লালবাগের এই কেল্লাটি তার কোনো ব্যতিক্রম নয়! শুধু কেল্লা নয় মুঘল নির্মানশৈলীতে শ্বেতপাথরে তৈরি মসজিদ ও পরিবিবির মাজার যেন তার সৌন্দর্যের পূর্নতা দেয়।
দ্বিতীয়ত লালবাগ কেল্লা এদেশে ইংরেজ বিরোধী সিপাহী বিপ্লবের অন্যতম কেন্দ্রবিন্ধু। সর্বভারতে মঙ্গলপান্ডের ডাকে সাড়া দিয়ে ছড়িয়ে পড়া সিপাহী বিপ্লবের উত্তাপ ঢাকায়ও ছড়িয়ে যায়। লালবাগ দূর্গের দেশীয় সিপাহীরা বিদ্রোহ শুরু করে দেয় এবং দূর্গের নিয়ন্ত্রন নেয়।
তবে শেষ পর্যন্ত ঢাকার প্রভাবশালী জমিদারদের সহায়তায় ইংরেজরা বিদ্রোহ দমন করে এবং সিপাহীদের আন্টাঘর ময়দানে সুউচ্চ পামগাছে (বর্তমানে বাহাদুর শাহ পার্ক) ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। ভারতীয় উপমহাদেশে বেনিয়া বিরোধী প্রথম এই আন্দোলনে বাংলার সিপাহীদের মহান আত্নত্যাগের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু এই কেল্লাটিতে এসে সে অমর ইতিহাসের সাক্ষী হতে পারা এক সৌভাগ্যের ব্যাপার।
শেষ এবং সবচেয়ে তাৎপর্যমণ্ডিত যে অধ্যায়টি কেল্লাটির সাথে রচিত আছে তা হল বাংলার বিখ্যাত সুবেদার শায়েস্তা খাঁ। জনদরদি এই শাসকের ইতিহাস যেন প্রতিটা বঙালীর কাছে রূপকথার গল্পের মত। বিখ্যাত এই শাসকের শাসনামলেই কেল্লাটি নির্মিত হয়। সুবেদার শায়েস্তা খাঁর শাসনামলের সোনালী অধ্যায়ের প্রতিটা গল্প যেন টিকে থাকা কেল্লার প্রতিটা ইট-পাথর স্বরণ করিয়ে দেয়।
আশেপাশে আর কোথায় যেতে পারেন
ভ্রমণচারীরা বারবার যেসব প্রশ্ন করে থাকে
পরী বিবির মাজার কোথায় অবস্থিত?
পরিবিবির মাজার ঢাকার লালবাগ কেল্লায় অবস্থিত।
শায়েস্তা খাঁর আসল নাম কি?
শায়েস্তা খাঁর আসল নাম মির্জা আবু তালিব বেগ।
শায়েস্তা খাঁর কন্যার নাম কি?
শায়েস্তা খাঁর কন্যার নাম ‘ইরান দুখত রাহমাত বানু ওরফে পরি বিবি’।
লালবাগ কেল্লা কে নির্মাণ করেন?
লালবাগ কেল্লা’মুহাম্মদ আজম শাহ’ নির্মান করেন।
লালবাগ কেল্লার আদি নাম কি?
লালবাগ কেল্লার আদি নাম ‘কিল্লা আওরঙ্গবাদ’।
শেষ কথা
ঢাকার যতগুলো ঐতিহাসিক নিদর্শণ রয়েছে লালবাগ দূর্গ তার মধ্যে ইতিহাস ও উৎকর্ষতার দিক দিয়ে সবচেয়ে অনন্য। সুবেদার শায়েস্তা খাঁ, মুঘল স্থাপত্যশৈলীর নান্দনিকতা, কন্যার প্রতি পিতার অপরিসীম ভালবাসার প্রতিচ্ছবি, সিপাহী বিদ্রোহ ও সুউচ্চ দূর্গ প্রাচীর এসব কিছুর কারনে লালবাগ কেল্লা বিখ্যাত। বিখ্যাত ঐতিহাসিক এই কেল্লাটি একবার ঘুরে দেখার সৌভাগ্যও কোনো হেলাফেলা কিছু নয়।
একটু দাঁড়ান ভাই! শুধু কি আমিই লিখে যাব? আপনি পড়লেন অথচ আপনার কোনো কথা থাকবে না সেটা হতে পারেনা।
কমেন্ট করে বলে যান লালবাগ দূর্গের ঠিক কোন জিনিসটা আপনার ভাল লাগে?