পাকশী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ বাংলাদেশের ১ম রেলওয়ে সেতু। ব্রিটিশ আমলে নির্মিত ডুয়েল গেজের এই সেতুটি কুষ্টিয়া জেলার ভেড়ামারা উপজেলার সাথে পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেলাকে সংযুক্ত করেছে। যা দক্ষিনবঙ্গ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সাথে বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গ ও রাজধানীকে রেলপথে সংযুক্ত করে। এখন পর্যন্ত রাজধানীর সাথে এটিই একমাত্র রেল যোগাযোগ সেতু।
এক নজরে
- এই ব্রিজটি এককভাবে বাংলাদেশের বৃহত্তম ইস্পাত নির্মিত ডুয়েল গেজ রেলওয়ে ব্রিজ।
- ব্রিজটির দৈর্ঘ্য ১,৭৯৮.৩২ মিটার বা ৫,৮৯৪ ফুট (১.৮ কি.মি)। সর্বমোট ১৫টি গার্ডার বা স্প্যান রয়েছে। প্রতিটি স্প্যানের দৈর্ঘ্য প্রায় ১২০ মিটার করে।
- তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের ভাইসরয় লর্ড ব্যারন হার্ডিঞ্জের নাম অনুসারে এই ব্রিজটির নামকরণ করা হয়। (সূত্র)
- টানা ৫ বছর অক্লান্ত পরিশ্রম শেষে ব্রিজটির নির্মানকাজ শেষ হয়।
- ব্রিজটি নির্মাণের জন্য প্রায় ২৪ হাজার ৪’শ শ্রমিক অক্লান্ত প্ররিশ্রম করেন।
- হার্ডিঞ্জ ব্রিজ নির্মানে ব্যয় হয় তৎকালীন ৩ কোটি ৫১ লক্ষ ৩২ হাজার ১ ‘শ ৬৪ ভারতীয় রুপি।
হার্ডিঞ্জ ব্রিজ এর অবস্থান
হার্ডিঞ্জ ব্রিজ তথা পাকশী রেল সেতুটির অবস্থান বাংলাদেশের পাবনা ও কুষ্টিয়া জেলার সংযোগস্থলে। ব্রিজটির দক্ষিন প্রান্তটিতে রয়েছে কুষ্টিয়া জেলা আর উত্তর প্রান্তে পাবনা জেলা।
হার্ডিঞ্জ ব্রিজ এর ইতিহাস

পূর্ব ভারত ও উত্তরবঙ্গের সাথে কলকাতার যোগাযোগ স্থাপনের উদ্দেশ্যে ১৮৮৯ সালে ব্রিটিশ সরকার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। বৃটিশ সরকারের এই প্রস্তাবটি পাস এর প্রায় ১৯ বছর পর নির্মাণের জন্য মঞ্জুরি লাভ করে । ১৯১০ সালে ব্রিজটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়।
ব্রিটিশ প্রকৌশলী স্যার রবার্ট উইলিয়াম গেইলস কে পাকশী ব্রিজ নির্মাণের দায়িত্ব দেওয়া হয়।এটি সফলতার সাথে নির্মাণের স্বীকৃতিস্বরূপ ব্রিটিশ সরকার তাকে পরবর্তীতে স্যার উপাধি তে ভূষিত করে।
স্যার উইলিয়াম জোন্স এর নেতৃত্বে ব্রেথওয়েইট অ্যান্ড কার্ক নামক ইনস্ট্রাকশন কোম্পানি এই ব্রিজটি নির্মান করে। আর ব্রিজটির নকশা প্রণয়ন করেন বিখ্যাত প্রকৌশলী আলেকজান্ডার মেয়াডোস রেন্ডেল।
হার্ডিঞ্জ ব্রিজ কেন নির্মান করা হয়?
বানিজ্যিক ও প্রশাসনিক প্রয়োজনে আসাম, নাগাল্যান্ড, ত্রিপুরা ও পূর্ববঙ্গের উত্তরবঙ্গের সাথে নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ স্থাপনের জন্য ব্রিটিশ সরকার ১৮৮৯ সালে ব্রিজটির প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে। সে বছরেই ব্রিজটির নির্মান প্রস্তাবনাও করা হয়। তবে, নির্মানকাজ আরম্ভ হয় ১৯১০ সালে।
নির্মান চ্যালেঞ্জ
১৯০৯ সালে ব্রিজ নির্মাণের জন্য সার্ভে শুরু হয়। তখন পদ্মা ছিল ভরা যৌবনা। রবার্ট উইলিয়াম গেইলস বুঝতে পারেন- ব্রিজের নির্মাণ তার জন্য অনেক চ্যালেঞ্জিং হবে। এজন্য তিনি সিদ্ধান্ত নেন মূল ব্রিজ নির্মাণের কাজ শুরু করাই আগেই নদী-রক্ষা বাঁধ তৈরি করতে হবে। ১৯১০-১১ সালের পুরোটা সময় জুড়ে শুধু বাঁধ নির্মাণ করা হয়।
নদী শাসনের জন্য তিনি বৃহদাকৃতির পাথর আর মাটি একত্রে মিশিয়ে নদীর পাড়ে দুই পাড়ে প্রায় পনের কিলোমিটার জুড়ে বাঁধ নির্মান করেন। আজও অবধি এই বাধ অক্ষত আছে।
নির্মানকাজ
১৯১২ সালে ব্রিজটির মূল অংশের কাজ আরম্ভ হয়। সাথে সাথে ব্রিজটির গাইড ব্যাংক নির্মাণের পাশাপাশি গার্ডার নির্মাণের কাজও শুরু হয়। সেতুটি নির্মাণের ক্ষেত্রে ব্রিটিশরা সমসাময়িক সর্বোচ্চ প্রযুক্তির ব্যবহার করে।

পাকশী রেল সেতুটি নির্মাণের জন্য প্রায় ২৪ হাজার ৪’শ শ্রমিক অক্লান্ত প্ররিশ্রম করেন। এসব শ্রমিকের অধিকাংশই ছিল বাঙালী।
ব্রিজ নির্মানের সাথে জড়িত ব্রিটিশ নাগরিকের জন্য পাকশীতে গড়ে তোলা হয় বাংলো বাড়ি ও কটেজ। রবার্ট উইলিয়াম গেইলসের একটি বড় বাংলো ছিল, যা এখনও টিকে আছে। শ্রুতিত যে, প্রায় এক কিলোমিটার দূরের এই বাংলো থেকে তিনি দূরবীন দিয়ে নির্মাণকাজ পর্যবেক্ষণ করতেন।
নির্মাণকাজের সময় পাকশী ও এর আশপাশে ছোটখাট অনেক কলকারখানা, দোকানপাট ও বাজারঘাট গড়ে ওঠে।

দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে নির্মাণকাজ শেষে ১৯১৫ সালে নির্মাণকাজ শেষ হয়। ব্রিজটির নির্মাণকাজে তৎকালীন হিসেবে ব্যয় হয়েছিল ৩ কোটি ৫১ লক্ষ ৩২ হাজার ১ ‘শ ৬৪ ভারতীয় রুপি।
প্রথম রেল চলাচল
১৯১৫ সালের ১ জানুয়ারি প্রথম পরীক্ষামুলকভাবে ট্রেন ঈশ্বরদী থেকে হার্ডিঞ্জ ব্রিজের উপর দিয়ে খুলনা অভিমুখে যাত্রা করে।

এরপর একই বছর ৪ঠা মার্চ লর্ড ব্যারন হার্ডিঞ্জ নিজে ফিতা কেটে ব্রিজটি উদ্বোধন করেন।
নামকরন
তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের গভর্ণর লর্ড হার্ডিঞ্জ এর নামে ব্রিজটির নামকরন করা হয় “হার্ডিঞ্জ ব্রিজ”।
হার্ডিঞ্জ ব্রিজ এর দৈর্ঘ্য
চোখে দিয়ে তাকালে ব্রিজটি বেশ বড় দেখাবে। তবে এর আসল দৈর্ঘ্য ১,৭৯৮.৩২ মিটার (৫,৯০০ ফু) বা ১.৮ কিমি।
পাকশী ব্রিজ নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন
হার্ডিঞ্জ ব্রিজ কোন নদীর উপর অবস্থিত?
পদ্মা নদী।
হার্ডিঞ্জ ব্রিজ কত সালে নির্মিত হয়?
হার্ডিঞ্জ ব্রিজ নির্মান আরম্ভ হয় ১৯১০ সালে যা শেষ হয় ১৯১৫ সালে।
হার্ডিঞ্জ ব্রিজের দৈর্ঘ্য কত?
পাকশী হার্ডিঞ্জ ব্রিজের দৈর্ঘ্য ১.৮ কিমি।
বিশ্বের দীর্ঘতম রেল সেতুর নাম কি?
বাংলাদেশের দীর্ঘতম রেল সেতুর নাম পাকশী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ।
হার্ডিঞ্জ ব্রিজ কোন নদীর উপর অবস্থিত?
হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পদ্মা নদীর উপর অবস্থিত।
হার্ডিঞ্জ ব্রিজটি কে নির্মান করেন?
ব্রিটিশ প্রকৌশলী স্যার রবার্ট উইলিয়াম গেইলস এর নেতৃত্বে ব্রিটিশ নির্মান কোম্পানী ব্রেথওয়েইট অ্যান্ড কার্ক নামক ইনস্ট্রাকশন কোম্পানি ব্রিজটি নির্মান করে।