ক’দিন হলো লকডাউনের পর বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর এই প্রথম বাড়িতে আসলাম।
আমাদের বাড়ি যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার একদম শেষ সীমানায় চিত্রা নদীর পাড়ে ঠিক মাগুরা জেলার কোলঘেষে।
ভাবছিলাম আশেপাশে আদৌ কি কোনো ঐতিহাসিক নিদর্শন আছে কিনা। বেশ খোজাখুজির পর জানতে পারলাম বাড়ি থেকে মাত্র মাইল দু’য়েক দূরে ছান্দড়া জমিদার বাড়ি।
আর দেরী কিসের, হালকা শীতের পড়ন্ত বিকেলে কয়েক বন্ধু মিলে বাইকযোগে রওনা হয়ে গেলাম!
আমি সেখান থেকে ঘুরে এসে এবং বেশ ঘাটাঘাটি করে যা যা জানলাম তা পুরো লেখাজুড়ে আপনার সাথে শেয়ার করব।
পড়তে থাকুন আপনি যদি জানতে চানঃ
শুরু করা যাক!
ছান্দড়া জমিদার বাড়ির ইতিহাস
ঠিক কবে এই জমিদার বাড়িটি নির্মিত হয়েছিল এবং কে এই জমিদার বংশের গোড়াপত্তন করেছিল সে ব্যপারে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
আমি যখন এখানে ঘুরতে গিয়েছিলাম তখন বেশকিছু স্থানীয় লোকজনের কাছে জমিদার বাড়িটি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। আশ্চর্যের ব্যপার স্থানীয়রা পর্যন্ত এই ব্যপারে সুস্পষ্ট কোনো তথ্য দিতে পারে না। তাদের কাছ থাকে যতটুকু জেনেছিলাম তা হলো, তারা এটিকে “বাবুর জমিদার বাড়ি” বলে চিনে।
তবে, আমি বেশ ঘাটাঘাটি করে জানতে পারলাম যে, জমিদার বাড়িটি মুঘল আমলের প্রথমার্ধে নির্মিত হয় এবং জমিদার অলঙ্গন মোহন দেব রায় বাড়িটি নির্মান করেন। এই জমিদার বাড়িতে বসেই জমিদারি দেখাশুনা ও খাঁজনা আদায় করা হতো।
সঠিক কিনা জানিনা তবে, স্থানীয়দের থেকে জানতে পারলাম এখানকার জমিদারেরা নাকি অবর্ণনীয় অত্যাচার ও শোষণ করত!
ছান্দড়া জমিদারদের জমিদারী বিস্তৃত ছিল তালখড়ি, ছান্দড়া, সীমাখালী, পিয়ারপুর ও আশেপাশের এলাকাজুড়ে।
এ অঞ্চলের সবচেয়ে প্রতাপশালী জমিদারী ছিল এই ছান্দড়ার জমিদারেরা।
ছান্দড়া জমিদার বাড়ি কোথায় অবস্থিত?
দর্শনীয় স্থান | ছান্দড়া জমিদার বাড়ি |
অবস্থান | ছান্দড়া, তালখড়ি, শালিখা, মাগুরা, বাংলাদেশ |
পরিচিত নাম | ছান্দড়া জমিদার বাড়ি, বাবুর জমিদার বাড়ি |
ঢাকা থেকে দূরত্ব | ২০০ কি.মি |
ড্রোন উড়ানো যাবে? | হ্যাঁ |
ছান্দড়া জমিদার বাড়ির অবস্থান মাগুরা জেলার শালিখা উপজেলার তালখড়ি ইউনিয়নের ছান্দড়া গ্রামে।
ঢাকা-মাগুরা মহাসড়কের পাশে অবস্থিত সীমাখালী বাজার থেকে যার অবস্থান মাত্র ১ কিলোমিটার।
ছান্দড়া জমিদার বাড়ি যেতে হলে আপনাকে প্রথমে মাগুরার সীমাখালী বাজারে আসতে হবে। মাগুরা-যশোর মহাসড়কের পাশে অবস্থিত সীমাখাঁলী বাজার ব্রিটিশ পিরিয়ডের এবং সবাই এক নামে চিনে।
সীমাখাঁলী বাজারে নেমে ইজিবাইক কিংবা ভ্যানে চড়ে ছান্দড়া জমিদার বাড়ি চলে যেতে পারবেন।
ঢাকা থেকে সড়কপথে আসা সহজ। যশোরগামী যেকোনো পরিবহনে করে সীমাখাঁলী আসতে পারবেন। তবে ট্রেনে কিংবা বিমানে আসতে হলে, যশোর শহর থেকে মাগুরাগামী লোকাল বাসে চড়ে সীমাখালী আসতে হয় তাতে ৩৫-৪০ মিনিট সময় লাগে আর ভাড়া পড়ে ৩৫-৪৫ টাকা।
ছান্দড়া জমিদার বাড়ির বর্তমান অবস্থা ও দেখার কি আছে?
জমিদার বাড়িটি এখন ধ্বংসপ্রায়। ভগ্নদশায় জীরশীর্নভাবে দাঁড়িয়ে থাকা এই বাড়িটি শুধুই কালের ইতিহাস বয়ে চলেছে।
বাড়িটি দেখে আমি যা বুঝেছি তা হলো, এটি ৬ করিডর বিশিষ্ট দ্বিতল বাড়ি ছিল। প্রতিটি তলায় ছিল ৬ টি করে কক্ষ। বর্তমানে বাড়িটির সামনের পাশের দেয়াল পুরোটাই খসে পড়েছে। পেছনের পাশের দেয়ালটি এখনও অক্ষত আছে।
জমিদার বাড়ির সামনেই রয়েছে পোস্ট অফিস এবং পেছনে ছান্দড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়। আর পাশেই পুরাতন ছান্দড়া বাজার। জমিদারেরাই এই বাজার স্থাপন করেছিল।
জমিদার বাড়ি থেকে সন্নিকটেই রয়েছে বিখ্যাত ক্রিকেট তারকা সৌরভ গাঙুলির বাড়ি। আর অদূরেই বাউল মাহেদ্র সাধকের বাড়ি। পাশ দিয়েই বয়ে গেছে চিত্রা নদী।
রয়েছে শানবাঁধানো একটি পুকুরঘাট, দুর্গা ও কালীমন্দির। জমিদারের ব্যবহৃত একটি হাতিশালাও ছিল এখানে, যা এখন ব্যাঙ নদীতে বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
যদিও বাড়িটি এখনও তার অস্তিত্বের জানান দিচ্ছে তবে আমার মনে হয় উপযুক্ত সংরক্ষনের উদ্যোগ না নেয়া হলে, অচিরেই ঐতিহাসিক নিদর্শনটি বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
কোথায় খাবেন?
জমিদার বাড়ির পাশের বাজারে হালকা নাস্তার উপযোগী দোকান-পাট পাবেন, তবে আহারের জন্য আপনাকে সীমাখালী বাজারে ফিরে আসতে হবে। সীমাখালি বেশ কিছু খাবার হোটেল পাবেন।
কোথায় থাকবেন?
থাকার জন্য আপনাকে মাগুরা সদরের কোনো হোটেলে উঠতে হবে। অথবা, শালিখা থানার ডাকবাংলো ভাড়া নিতে পারেন।
আপনার উদ্দেশ্যে
ছান্দড়া জমিদার বাড়ি একদম অপরিচিত একটি প্রত্নতত্ন নিদর্শন। আমার মত আপনিও নিশ্চয়ই চান, অপরিচিত কিংবা স্বল্প পরিচিত অথচ সম্ভাবনাময়ী দর্শনীয়স্থানগুলো সম্পর্কে সবাই জানুক এবং দেশের পর্যটনশিল্প আরও বিকশিত হোক!
যদি তাই হয়, এই লেখাটি একজন কাছের মানুষের সাথে কিংবা আপনার সোশ্যাল প্রোফাইলে শেয়ার করে দিন।
এমন এমন দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে আগে আগে জানতে কিংবা ভ্রমণ সম্পর্কিত প্রশ্ন করতে ও উত্তর জানতে আমাদের ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করতে পারেন!
টাটা পারলে জমিদার বাড়িটা নিয়ে নিচে একখান কমেন্ট করেন।