চিম্বুক পাহাড় কেন যাবেন কি দেখবেন? (পূর্নাঙ্গ ভ্রমণগাইড)

রাহাত ভাইয়ের অনেকদিনের শখ বান্দরবান যাওয়া। আমারও ঘুরতে ভালোই লাগে, উনার অনুরোধে একসাথে যাব ঠিক করলাম। অফিসের কাজের চাপে যেতে চাইলেও যাওয়া হচ্ছিল না। ডিসেম্বরে কাজ কম। ছুটি নিয়ে বেড়িয়ে এলাম বান্দরবান। 

মোটামুটি বান্দরবানের সকল দর্শনীয় স্থান ঘুরেছি আমি, যদিও রাহাত ভাইয়ের সাথে শুধু শহরের আশেপাশের ৪ টি স্থান- নীলগিরি, নীলাচল, চিম্বুক ও শৈলপ্রপাত ঝর্ণা

আজ আপনাদের সাথে শেয়ার করব বান্দরবানের চিম্বুক পাহাড় বেড়ানোর রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা।

সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ২৫০০ ফুট উচু এই পাহাড় বাংলাদেশের তৃতীয় সর্বোচ্চ পাহাড়। এই মন ভোলানো প্ররাকৃতিক সৌন্দর্যের সাথে পাশের দেশ ভারতের দার্জিলিং এর মিল পাওয়া যায় বলে একে অনেকে বাংলার দার্জিলিং বলেও ডাকেন। তবে যে যাই ডাকুক না কেন, এর সৌন্দর্য্যের সাথে তুলনা হবে না অন্য কোনো জায়গার।

তাই আর দেরি না করে দেখে নিন চিম্বুক পাহাড়ে কি দেখবেন, কীভাবে যাবেন, আশেপাশে কোথায় ঘুরবেন, খাবেন সহ অনেক কিছু!

চিম্বুক পাহাড় কোথায় অবস্থিত?

বাংলাদেশের সবচেয়ে কম ঘনবসতির জেলা বান্দরবানের সদর-থানচি সড়কের পাশে এর অবস্থান। জেলা শহর থেকে  দূরত্ব প্রায় ২৫ কিলোমিটার। দুইদিকে পাহাড়ে ঘেরা যাওয়ার রাস্তাও দেখতে বেশ মনোমুগ্ধকর। এই চিম্বুক পাহাড়ের চূড়াতে আছে চিম্বুক পর্যটন এলাকা।

কেন আসবেন চিম্বুক পাহাড়?

পাহাড়ী সৌন্দয্যের রানী এই চিম্বুক পাহাড়। বান্দরবান ভ্রমণ অসম্পূর্ণ থেকে যাবে যদি চিম্বুক পাহাড়ে বেড়াতে না  যান। কেবল পাহাড় না, পাহাড়ে যাওয়ার পথে রাস্তার দুইপাশে দেখতে পাবেন অসাধারণ সব দৃশ্য। এছাড়াও যাওয়ার পথে পাবেন মিলনছড়িশৈলপ্রপাত ঝর্ণা

পাশে দেখে যেতে পারেন সাঙ্গু নদী। একেবেকে চলা এই নদী আপনাকে মুগ্ধ করবেই। যাওয়ার পথে চোখে পড়বে অসংখ্য উপজাতী আবাস। এই বাসাগুলো মূলত ম্রো উপজাতীর। মাচার উপর বানানো ঘরগুলো দেখতেও বেশ আকর্ষণীয়। সাথে পরিচিত হয়ে আসতে পারেন তাদের সংস্কৃতি আর জীবনযাত্রার সাথে।

চিম্বুকের আশেপাশে তাকালে মনে হবে যেন কোনো সাজানো পাহাড়চূড়া। এই পাহাড়চূড়া আপনার মনে এনে দিবে প্রশান্তি ভাব। এছাড়াও মনকে করে তুলবে শান্ত। তাছাড়া এই পাহাড়েই পাবেন বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সড়ক। এই গেল পর্যটন স্পটে পৌছানোর আগের জিনিস।

এবারে ঠিক জায়গায় আসি। পর্যটন স্পটে পৌছেই দেখবেন দক্ষিনে একটি সিড়ি। এই সিড়ি দিয়ে নামলেই নবচত্বর। আপনি আগস্ট থেকে অক্টোবরের মধ্যে যান, তাহলে দেখবেন ভূবন ভূলানো পেজা তুলার মত মেঘ উড়ে বেড়াচ্ছে। বর্ষায় গেলে মনে হবে যেন মেঘের রাজ্য প্রবেশ করেছেন। এই জায়গা মেঘের কাছাকাছি হওয়ায় কিছুটা ঠান্ডা থাকে। 

এছাড়াও মূল সড়কের উপরে দেখতে পাবেন সড়ক ও জনপদ বিভাগের রেস্টহাইজ।

যদি বিকালে থাকেন তাহলে সন্ধ্যা বেলায় সূর্যাস্ত দেখতে পাবেন। সবচেয়ে ভাল হয় যদিই রাতও চিম্বুক পাহাড়ে কাটাবার ব্যবস্থা করে নিতে পারেন। তাহলে রাতের বেলা শব্দহীন পরিবেশে পাহাড়া আর তারাদের অসাধারণ মিলবন্ধন দেখবেন। পূর্ণিমা রাত আরো ভাল।পাহাড়ে চাঁদের আলোর  বন্যা আপনার মন ভাল করে দেবে। অপার্থিব এক সৌন্দর্য আপনাকে ডাকবে হাতছানি দিয়ে। আপনার কেবল তাকাবার অপেক্ষা।

নয়াভিরাম সূর্যাস্ত ও সূর্যদয়ের দৃশ্য চিম্বুক পাহাড়ে সৌন্দর্যকে অন্য মাত্রায় নিয়ে যায়।

শীতকালে সকালে গেলে কিছুটা পস্তাবেন। বেশ কুয়াশা থাকে বলে প্রায় কিছুই দেখতে পাবেন না। তাই আমার পরামর্শ থাকবে শীতকালে না যাওয়ার জন্য। তবে যদি কুয়াশায় পাহাড় লুকানোর দৃশ্য আপনার পরিচিত না থাকে, একবার দেখে আসতে পারেন। 

এই পর্যটন স্পট থেকে পাশের জেলা চট্টগ্রাম আর কক্সবাজারের উপজেলাগুলোকেও দেখা যায়। যাওয়ার সময় একটা বাইনোকুলার নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ রইল। পাহাড় থেকে দূরের দৃশ্য উপভোগ করার দারুন একটা হাতিয়ার হতে পারে এটা।

কিভাবে যাবেন?

বান্দরবান জেলা শহরে পৌছে চাঁদের গাড়ি, সি এন জি কিংবা বাসে করে যেতে পারেন বহুল কাংখিত  চিম্বুক পাহাড়ের চূড়ায়। জেলা শহর থেকে পৌছাতে সময় লাগে প্রায় ১ ঘন্টা ৩০ মিনিট। সি এন জি ভাড়া করলে আগেই দরদাম করে নিতে ভূলবেন না। নাহলে অযৌক্তিক ভাড়া ধরিয়ে দেবে।

কি খাবেন?

দূর্গম পাহাড়ি এলাকা বলে ভাল থাকা-খাওয়ার  জায়গা নেই। এসব টুরিস্ট স্পটে খাবার মানের থেকে দাম সবসময় বেশি রাখবে। তবে ফিয়েস্তা আর তাজিংডং নামের দুটো মোটামুটি ভালো মানের রেস্তোরা আছে। থাকার জন্য জেলা প্রশাসকের তত্ত্বাবধানে রেস্ট হাউজ আছে। আছে সেনাবাহিনীর ক্যান্টিন। এই ক্যান্টিনে সকালের নাস্তা আর দুপুরের খাবার পেয়ে যাবেন। এছাড়াও চিম্বুক টুরিস্ট সেন্টারের সামনে আদিবাসীদের হোটেল পাবেন।

চূড়ার একটু নিচে নামলেই বাজার আছে। বাজারে বেশ অনেক ধরনের ফল পাওয়া যায় সারা বছর। ফরমালিন বা অন্যান্য রাসায়নিক মুক্ত এই ফল খেয়ে আসতে ভূলবেন না।

কোথায় থাকবেন?

পাহাড়েই রেস্ট হাউজ আছে। তবে তাতে থাকার জন্য আগেই অনুমতি নিতে হয়। তবে চিম্বুকে রাত্রি যাপন করার চিন্তা বাদ দেওয়াই ভাল। শহরে এসে থাকতে পারেন। চিম্বুকের আশে পাশে থাকার মত ভালো কোনো আবাসিক হোটেল নেই।

শহরে হোটেলের মান ভেদে থাকতে পারেন ৬০০ টাকা থেকে শুরু করে ৩০০০ টাকায়। পাহাড়ী রাস্তায় বিকাল ৪ টার পরেই গাড়ি চলাচল কমে যায়। এই কথা মাথায় রাখা খুবই দরকারি। 

ভাল মানের জায়গায় থাকতে চাইলে দেখতে পারেন

  • সাইরু হিল রিসোর্ট (০১৫৩১৪১১১১১)
  • নীলগিরি হিল রিসোর্ট (০১৭৬৯২৯৯৯৯৯)
  • ভেনাস রিসোর্ট: ফোন- ০৩৬১-৬৩৪০০, ০১৫৫২৮০৮০৬০, ০১৮৫৬৬৯৯৯১০, ০১৮৫৬৬৯৯৯১১। 
  • হোটেল প্লাজা ফোন: ০৩৬১-৬৩২৫২
  • হিলসাইড রিসোর্ট ফোন: ০১৫৫৬৫৩৯০২২, ০১৭৩০০৪৫০৮৩। 
  • হোটেল ফোর স্টার ফোন:-০৩৬১-৬৩৫৬৬, ০১৮১৩২৭৮৭৩১,০১৫৫৩৪২১০৮৯। 
  • হোটেল থ্রী স্টার ফোন:- ০১৫৫৩৪২১০৮৯। 
  • হোটেল হীল কুইনঃ ফোনঃ ০১৮৫৬৬৯৯৯১০

আর কম টাকায় থাকতে চাইলে দেখতে পারেন

  • হোটেল হিল ভিউ ফোন: ০৩৬১-৬৩০৪৫
  • হোটেল রিভার ভিউঃ ফোন- ০৩৬১-৬২৭০৭, ০১৭৩১-১১২৭৫৭
  • পর্যটন মোটেল ফোন: ০৩৬১-৬২৭৪১,০৩৬১-৬২৭৪২।
  • হোটেল গ্রিন ল্যান্ডঃ ফোন- ০৩৬১-৬৩৬১৩, ০১৮৪৫-৯৯৫৫৫৯। 
  • হোটেল থ্রি ষ্টারঃ ফোন- ০৩৬১-৬৩৫৬৬ , ০১৮১৩-২৭৮৭৩১। 
  • হলিডে ইন্টারন্যাশনালঃ ফোন- ০১৭৪৮-৯৬২৩১২, ০১৫৫৩-৩২৫৩৪৭। 
  • হোটেল সাঙ্গুঃ ফোন- ০৩৬১-৬৩৬০৬-৭, ০১৭৩১-৭৩৬২০০

চিম্বুক পাহাড়ের ইতিহাস

পাহাড়টি দেশের পার্বত্য জেলা বান্দরবানে অবস্থিত। খুব বেশি সময় হয়নি এই পাহাড় দর্শনার্থীদের জন্য অবমুক্ত করা হয়েছে।

চিম্বুক পাহাড় ও আশে পাশের জায়গায় কোন উপজাতী বাস করে?

চিম্বুক পাহাড় ও আশে পাশের জায়গায় মোট ১১ টি ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী বা আদিবাসী বাস করে। এরা হচ্ছেন মারমা, চাকমা, মুরং, ত্রিপুরা, লুসাই, খুমি, বোম, খেয়াং, চাক, পাংখো ও তংচংগ্যা । এদের মধ্যে চিম্বুক পাহাড়ের চূড়া, পাদদেশ আর আশে পাশের এলাকায় ম্রো আদিবাসী পরিবারের সংখ্যা বেশি।

চিম্বুক পাহাড়ের উচ্চতা কত?

চিম্বুক পাহাড়ের উচ্চতা ২৫০০ ফুট।

চিম্বুক পাহাড় উচ্চতার দিক থেকে দেশের কততম?

উচ্চতার দিক থেকে চিম্বুক দেশের তৃতীয় বৃহত্তম পাহাড়। 

ভ্রমণ, লেখালেখি ও সাংবাদিকতায় আসক্ত। কাচ্চির আলু আর দুধ খেজুরে পিঠার পাগল। নিজের ভ্রমণ গল্পগুলো লিখি এখানে। ফেসবুক, টুইটারে আমাকে অনুসরন করতে পারেন!

Twitter | Facebook

মন্তব্য করুন