বান্দরবানের স্বর্ণমন্দির এ যা দেখবেন (ভ্রমণ গাইড ও রিভিউ)

ভ্রমণ প্রেমীদের অন্যতম আকর্ষণীয় গন্তব্য হচ্ছে বান্দরবান!

বান্দরবানের দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে বিশেষত শহরের আশেপাশে গন্তব্যগুলোর মধ্যে স্বর্ণমন্দির অন্যতম।

এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বুদ্ধদেবের মূর্তি। মূর্তিটি গৌতম বুদ্ধের সমসাময়িক কালে নির্মিত এবং পরবর্তীতে তা স্থানান্তর করে এখানে স্থাপন করা হয়। এ মূর্তিটি প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি করা হয়েছে।

স্বর্ণ মন্দিরের সোনালী রং এর জন্যই এটি মূলত স্বর্ণমন্দির বলা হয়ে থাকে। বুদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম পবিত্র স্থান বলে গণ্য এই মন্দির। স্বর্ণ মন্দিরের উদ্দেশ্যে প্রতি বছ্র দেশের পর্যটক ছাড়িয়ে মায়ানমার, চীন, থাইল্যান্ড ইত্যাদি দেশের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী দার্শনিকেরা এসে ভ্রমণ করে যায়।

স্বর্ণমন্দির কি?

স্বর্ণমন্দির (Golden Temple) মূলত বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের মন্দির বা উপাসনালয়। দেখতে চকচকে সোনালী রংয়ের বিধায় একে স্বর্ণমন্দির বলা হয়, যদিও এটি স্বর্ণ দিয়ে তৈরি নয়।

স্বর্ণমন্দির কোথায় অবস্থিত? কে কখন নির্মাণ করেছিলেন? (স্বর্ণ মন্দিরের ইতিহাস)

স্বর্ণ মন্দির মহাসুখ মন্দির বা বুদ্ধ ধাতু জাদি মন্দির নামেও পরিচিত। এটিবান্দরবান জেলা সদর থেকে ৯ কিলোমিটার দূরে বালাঘাটা অঞ্চলের সুউচ্চ পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত।

স্বর্ণমন্দির মূলত স্থানীয় মারমাদের উপাসনা স্থল হিসেবে তৈরি করা হয়েছিল। ধারণা করা যায় ১৯৯৫ সালের এ মন্দিরটি নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং ২০০৪ সাল পর্যন্ত এ মন্দিরটি নির্মাণ কাজ চলে। 

বান্দরবানের অবস্থিত স্বর্ণমন্দির দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বড় হীনযান বৌদ্ধমন্দির। এ মন্দিরটি মিয়ানমারের কারিগর দিয়ে তৈরি। এখানে স্থাপিত বুদ্ধ মূর্তি কাঠের তৈরি যা কিনা এক অনন্য দৃষ্টান্ত। এ মন্দিরটির বাহিরে রয়েছে বিশাল কারুকার্য। যা মন্দিরের সৌন্দর্য বহু গুনে বারিয়ে দেয়।

এই মন্দিরটি দেখতে কেমন- আসলেই কি সুন্দর?

স্বর্ণমন্দির দক্ষিণ এশিয়ার এক বিশাল আশ্চর্য। স্বর্ণমন্দিরে যেমন রয়েছে আশ্চর্যজনক নির্মাণশৈলী তেমনই রয়েছে মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশ। মন্দিরটি সাজানো হয়েছে নান্দনিক সাজে। মন্দিরের বাইরে রয়েছে বারোটি বুদ্ধমূর্তি। যা কিনা স্বর্ণ মন্দিরের সৌন্দর্য কে অনেক বেশি বাড়িয়ে তোলে। এই মূর্তি গুলোর প্রতিটিতে রয়েছে বৌদ্ধ ধর্মের শিক্ষার প্রতীক মুদ্রা। যা ব্যবহার করা হয়েছে বৌদ্ধ ধর্মের বিশেষ শিক্ষার প্রতীক হিসেবে। 

মন্দিরে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী লোকেরা বিভিন্ন সময়ে মন্দির ভ্রমন করে থাকেন। পূর্ণিমার রাতে বুদ্ধদেবকে স্মরণ করতে মন্দিরটিতে উপস্থিত হয় হাজার হাজার বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী তাদের পবিত্র স্থানে ভ্রমন করে এবং হাজার হাজার মাটির প্রদীপ জ্বালায়।

এ মন্দিরটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৬০০ ফুট উঁচুতে স্থাপিত কিন্তু তবুও মন্দির দেখতে আসা লোকের কাছে এ উচ্চতা কিছুই নয়। এই উচ্চতা ডিঙিয়ে তারা স্বর্ণমন্দির দর্শন করতে আসে।

স্বর্ণমন্দিরে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ভক্তদের ছাড়াও পর্যটকদের আনাগোনাও প্রচুর মেলে। নির্মাণকালীন বছরগুলোর তুলনায় বর্তমানে এর পর্যটকের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। পর্যটকদের কথা মাথায় রেখে প্রতি বছর মন্দিরে মেলার আয়োজন করা হয়। যা মন্দিরের এর সৌন্দর্য বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়।

স্বর্ণমন্দিরে পর্যটকদের আনাগোনার মূল কারণ হচ্ছে এখানে উপস্থিত মূর্তি। এ মূর্তিটি মিয়ানমারের বার্মার স্থাপত্যবিদ এর তত্ত্বাবধানে তৈরি হয়েছে। এ জায়গাটি শুধু ভ্রমণপিপাসুদের অংশ নয় বরঞ্চ বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের তীর্থস্থান। প্রতিবছর শুধুমাত্র বাংলাদেশ থেকে নয় বাংলাদেশের বাহির থেকে বিদেশী পর্যটকদের আনাগোনা হয়। 

এই মুহূর্তকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন স্থানের, বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষজন স্বর্ণমন্দিরের কেন্দ্র করে বান্দরবান ভ্রমণ করে থাকেন। পূর্বের পর্যটক সংখ্যা এত বেশি ছিল না কিন্তু বর্তমানে যাতায়াত ব্যবস্থার সুগম হওয়ায় পর্যটন সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। 

স্বর্ণমন্দিরের পাশে রয়েছে একটি পুকুর। যার নাম দেবতাপুকুর। এটি প্রায় সাড়ে ৩০০ ফুট উঁচুতে অবস্থান। তবুও প্রকৃতির কী আশ্চর্য লীলাখেলা। এতে সকল মৌসুমে পানি পাওয়া যায়। স্বর্ণমন্দিরের পাশেই এ দেবতাপুকুর থাকায় এখানে পর্যটকদের বেশ আনাগোনা দেখা যায়।

ভ্রমণচারী টিপ
মন্দিরটির আসল সৌন্দর্য দেখতে চাইলে বান্দরবান ট্যুর প্লান এমনভাবে করুন যাতে করে, শিডিউলে এটি বিকালে পড়ে। বেশিরভাগ মানুষজন এটা জানেনা, তবে আপনি ভ্রমণচারীর পাঠক- আপনি স্মার্ট! 🙂

ভ্রমণচারী রিভিউ

৭/১০

জানুন: ভ্রমণচারী কিভাবে রিভিউ দেয়

কি কি নিয়ম মেনে চলতে হবে?

স্বর্ণমন্দির সাধারন জায়গা নয়, এটি বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের তীর্থস্থান। তাই সেখানে অশালীন পোশাকে প্রবেশ একেবারে নিষিদ্ধ। 

বিশেষত মন্দির চত্বরে শর্ট প্যান্ট, লুঙ্গি এবং জুতা পায়ে প্রবেশ নিষেধ। মন্দিরের সম্মান রক্ষার্থে সকল দর্শনার্থীকে এ নিয়ম মেনে চলতে হবে। মন্দিরের মূল অংশের সাধারণত দর্শনার্থীদের প্রবেশ করতে দেয়া হয় না। 

তবে যারা তীর্থস্থান ভ্রমণে আসেন তাদের ব্যাপারটা ভিন্ন। মন্দিরের দর্শন করতে আসা অনেক দর্শনার্থী অনেকক্ষেত্রে ভুলে যায় যে এটি একটি তীর্থস্থান। তাই সম্পূর্ণ সচেতনতার সাথে প্রত্যেক পদক্ষেপ নিতে হবে। কারণ এটি কোন দর্শনীয় জায়গা নয়। এটি একটি পবিত্র স্থান। 

পূর্বে থেকে জানা যায় অনেক পর্যটকই ঘুরতে এসে ভুলে যান এটি একটি দর্শনীয় স্থান এবং তারা কিছু সীমানা লংঘন করে। যার কারণে ২০১৬ সালে দীর্ঘ নয় মাসের জন্য মন্দির বন্ধ রাখা হয়েছিল। যা খুবই নিন্দনীয়। মন্দিরে ঘুরতে আসা কালে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। এমন কোন কাজ করা যাবে না, যা কোনো গোষ্ঠী, কোন সম্প্রদায় কিংবা কোনো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানে।

প্রবেশ ফি, বন্ধ ও খোলার সময়সূচী

নামমাত্র ২০ টাকা প্রবেশ ফি জমা দিয়ে দর্শনার্থীরা মন্দিরে প্রবেশ করতে পারে। 

দর্শনার্থীদের প্রবেশ একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সীমাবদ্ধ। তবে ধর্মীয় চর্চা কিংবা পূজার্চনা করার ক্ষেত্রে ৬ টার পরেও মন্দিরে প্রবেশ করা যায়। তবে সেটা পর্যটকদের জন্য নহে। পাশাপাশি সন্ধ্যা ৬ টার পরে মন্দির বন্ধ হয়ে যায় দর্শনার্থীদের জন্য। তবে যদি আপনি পূজা-অর্চনা করতে চান, তবে সেক্ষেত্রে ৬ টার পরেও পূজা-অর্চনা করতে পারবেন।  

বান্দরবানের স্বর্ণমন্দিরে কিভাবে যাবেন?

স্বর্ণমন্দির যাওয়ার জন্য প্রথম যেতে হবে বান্দরবানে । ঢাকায় অবস্থিত বিভিন্ন পরিবহন কাউন্টার থেকে বান্দরবানের উদ্দেশ্যে বাস ছেড়ে যায়। সেখান থেকেই বান্দরবানের উদ্দেশ্যে পরিবহন সেবা পেয়ে যাবেন।

ঢাকার আরামবাগ, আব্দুল্লাহপুর, সায়েদাবাদ, গাবতলী এর মত সুপরিচিত বাস কাউন্টার থেকে বান্দরবানের উদ্দেশ্যে বাস ছেড়ে যায়। বান্দরবানের উদ্দেশ্যে ভ্রমণে হানিফ, শ্যামলী, ডলফিন, ইউনিক, সৌদিয়া ইত্যাদি এর মত পরিবহনের পরিবহন সেবা নিতে পারেন। এসি, নন-এসি উভয় ক্ষেত্রেই  মাত্র ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা ব্যয়ে আপনি পরিবহন সেবা পেয়ে থাকবেন। ৭-৮ ঘন্টায় পৌছে যাবেন।

বান্দরবান পৌঁছে স্বর্ণমন্দির যাবার উদ্দেশ্যে বান্দরবান বিখ্যাত চান্দের গাড়ি বা সিএনজি-অটোরিকশা ভাড়া করতে পারেন। সময় হিসেবে ৩০০ থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত চার্জ করতে পারে। তবে দরদাম হেকে গাড়ি বা অটোরিকশা ভাড়া করাটাই ভালো।

আরও দেখুন:

কোথায় থাকবেন এবং কি খাবেন?

বান্দরবান যেহেতু পর্যটকদের এখন কেন্দ্রবিন্দু। তাই সেখানে পর্যটকদের সেবার জন্য রিসোর্ট, হোটেল, মোটেল এবং রেস্টহাউজ রয়েছে। যেখানে কিনা ৬০০ থেকে ৩০০০ টাকার মধ্যে আপনি সেবা নিতে পারেন।

আপনার বাজেট অনুযায়ী কোন হোটেলে-রিসোর্টে উঠবেন? এখানে দেখুন- বান্দরবানের রিসোর্ট ও হোটেলসমূহঃ বাজেট অনুযায়ী তালিকা (ও যোগাযোগ নাম্বার)

বান্দরবানে ঘুরতে গিয়ে বান্দরবানের ঐতিহ্যবাহী খাবার খেয়ে আসা যেতে পারে। তবে বিভিন্ন ক্যাফে, রেস্তোরাঁ, রেস্টুরেন্ট রয়েছে যেখানে কিনা স্থানীয় খাবারের পাশাপাশি অন্যান্য খাবার পাওয়া যায়।

বান্দরবান ঘুরতে গিয়ে কি কি দেখবেন?

সাধারণত ব্যস্ততা পূর্ণ জীবনে ঘুরতে যাওয়ার জন্য সময় বের করা খুবই কষ্টসাধ্য। এমতাবস্থায় যদি বান্দরবান ঘুরতে গিয়ে থাকেন। তবে, বান্দরবান শহরের আশেপাশে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে আসতে পারেন। 

যেমন-

ভ্রমণ, লেখালেখি ও সাংবাদিকতায় আসক্ত। কাচ্চির আলু আর দুধ খেজুরে পিঠার পাগল। নিজের ভ্রমণ গল্পগুলো লিখি এখানে। ফেসবুক, টুইটারে আমাকে অনুসরন করতে পারেন!

Twitter | Facebook

মন্তব্য করুন